তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে যা বললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
(last modified Thu, 05 Oct 2017 12:06:09 GMT )
অক্টোবর ০৫, ২০১৭ ১৮:০৬ Asia/Dhaka

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি ইরাকের কুর্দিস্তানে অনুষ্ঠিত গণভোটের পেছনে ইসরাইল ও আমেরিকার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “আমেরিকাসহ পশ্চিমা সরকারগুলোকে বিশ্বাস করা যায় না এবং তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি ইসরাইল সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।" তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে দেয়া সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইরাক থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রশ্নে কুর্দিস্তানে অনুষ্ঠিত গণভোটকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন এ পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি ওই গণভোটকে এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর দীর্ঘমেয়াদে ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরান ও তুরস্কের উচিত এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ইরাক সরকারেরও উচিত কুর্দিস্তানের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেয়া। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিচ্ছিন্নতা প্রশ্নে কুর্দিস্তানের গণভোটের ব্যাপারে আমেরিকা ও ইউরোপীয় সরকারগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ইরান ও তুরস্কের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। পাশ্চাত্যের ইরান ও তুরস্ক বিরোধী চেতনা থেকেই এ পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে বলেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্ক শুরু থেকেই ইরাকের কুর্দিস্তানের বিচ্ছিন্নতার তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। কুর্দিস্তানে গণভোট অনুষ্ঠানের বহু আগ থেকেই এ দুই দেশ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তেহরান ও আঙ্কারা আধা স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানির গণভোটের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং তারা মনে করে এ পদক্ষেপের ফলে শুধু যে কুর্দি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই নয় একই সঙ্গে ইরাকসহ সমগ্র ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।

কুর্দিস্তানে অনুষ্ঠিত গণভোটের বিষয়ে আলোচনা করা ছিল তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ইরান সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট রুহানি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "ইরাকের কুর্দিস্তানের জনগণ ভালো প্রতিবেশী এবং আমরা তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু কুর্দি কোনো নেতা যে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন তার খেসারত তাদেরকে দিতে হবে এবং তাদের জেনে রাখা উচিত ইরান, তুরস্ক ও ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এ অঞ্চলে তাদের অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর।" 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইরাকের কুর্দিস্তান থেকে তেল কিনে থাকে। এ কারণে তারা ইরাক থেকে কুর্দিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার বিরোধী নয়। যদিও আমেরিকা ও ইউরোপ ইরাকের অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে কিন্তু বিচ্ছিন্নতা প্রশ্নে কুর্দিস্তানের গণভোটের ফলাফলকে তারা প্রত্যাখ্যানও করেনি। পাশ্চাত্য এমন এক পথে হাঁটছে যা কেবল ইসরাইলের স্বার্থই রক্ষা করবে।

এ বিষয়ে লেবাননের ইন্টারনেট ভিত্তিক বার্তা সংস্থা আল আহাদ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী জাফরির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, "ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে এমন এক অবস্থা সৃষ্টির পায়তারা করছে যাতে তাদের স্বার্থ রক্ষা পায়। কুর্দি অঞ্চলের সঙ্গে ইসরাইলেরও অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইলের ধারণা কুর্দি ইস্যুটি যতবেশী চাঙ্গা হবে ততই মানুষ ফিলিস্তিন সমস্যা ভুলে থাকবে।"

ইসরাইলের নীলনকশা অনুযায়ী ইরাক থেকে কুর্দিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে কুর্দি নেতাদের এক টেবিলে বসে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবৈধ এবং কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

যাইহোক, কুর্দিস্তানের বিচ্ছিন্নতার প্রতি ইসরাইলের সমর্থন এবং এ ব্যাপারে আমেরিকার দ্বিমুখী নীতি থেকে বোঝা যায়, ইসরাইল ও আমেরিকা ইরাক ও সিরিয়ার মতো এ অঞ্চলের বৃহৎ দেশগুলোকে ভেঙে আরো ছোট ছোট রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানও এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, কুর্দি নেতা মাসুদ বারজানি গণভোটের আয়োজন করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।#  

পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/৫  

 

ট্যাগ