ইসলামি ঐক্য সম্মেলন থেকে ইন্তিফাদা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ঘোষণা
২৬ ধারাবিশিষ্ট প্রস্তাব পাসের মধ্যদিয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলন শেষ হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন থেকে শত্রুদের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তেহরানের আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলনে গৃহিত প্রস্তাবে দু’টি বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, সব ধরনের যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে মুসলিম সভ্যতার পুনর্জাগরণের চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত বায়তুল মুকাদ্দাসকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিকীকরণ করার ইসরাইলি নীতির প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন যে সমর্থন জানিয়েছে তা প্রতিহত করতে হবে। এ লক্ষ্যে মুসলিম বিশ্বের সামনে আরেকটি ইন্তিফাদা গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
ইরাক ও সিরিয়া থেকে উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশ নির্মূল হয়ে যাওয়ার পর মুসলিম বিশ্ব যখন খানিকটা দম ফেলার সুযোগ পেয়েছে তখনই মুসলমানদের শত্রুরা নয়া ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য হচ্ছে কিছু চিহ্নিত আরব দেশের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগ নিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিরাপত্তাকে নিরবচ্ছিন্ন করা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি বায়তুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেম শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলমানদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কিছু বিশ্বাসঘাতক আরব দেশের কারণে ট্রাম্প এই উস্কানিমূলক ঘোষণা দেয়ার সাহস পেয়েছেন। বিশেষ করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সৌদি উদ্যোগ ট্রাম্পের এ ঘোষণার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
ট্রাম্পের এই উস্কানিমূলক ঘোষণার কারণে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের আরো বেশি সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে ইসলামের শত্রুদের কোনো ষড়যন্ত্রই তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। এই প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করেই তেহরানের ইসলামি ঐক্য সম্মেলন থেকে ফিলিস্তিনিদের নয়া ইন্তিফাদা গণআন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।
মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থেকে সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদীবাদীদের বায়তুল মুকাদ্দাস বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারলেই এই চক্রান্ত অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া সম্ভব হবে।
মুসলমানদের প্রথম কেবলাসমৃদ্ধ শহর বায়তুল মুকাদ্দাসের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার বিশ্বের কোনো দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে নেই। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের মুসলিম জাতি এই নগরীর ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারেন। ফিলিস্তিনি জনগণ বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দশকের পর দশক ধরে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন। কাজেই তেহরানের ইসলামি ঐক্য সম্মেলন থেকে তাদের সে আন্দোলনের প্রতি যে সমর্থন জানানো হয়েছে তাকে স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনি জাতি স্বাগত জানাবে।
এ ছাড়া, ফিলিস্তিনি জনগণ নতুন করে তেল আবিবের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদা গণ আন্দোলন শুরু করতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একমাত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতি তার অধিকার ফিরে পেতে পারে অন্য কোনো পন্থায় নয়। এ সম্পর্কে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, একমাত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে মার্কিন সমর্থিত ইসরাইলি নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। কাজেই ফিলিস্তিনিদের সামনে ইন্তিফাদা গণআন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৮