ইরানের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন জন বোল্টন
(last modified Thu, 01 Nov 2018 12:23:45 GMT )
নভেম্বর ০১, ২০১৮ ১৮:২৩ Asia/Dhaka

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময়ই ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে এসেছেন এবং এমনকি তিনি একে সবচেয়ে খারাপ চুক্তি বলে অভিহিত করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানে ওপর আগস্ট ও নভেম্বর দুই দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন।

প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ওয়াশিংটন বর্তমানে দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং অন্য দেশের সঙ্গে ইরানের ব্যাংকিং সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া যাতে দেশটির অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অর্থনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বর আগামী ৫ নভেম্বর ঘনিয়ে আসার আগেই ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়ার জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসা সত্বেও ইরান বিরোধী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, ৫ নভেম্বর থেকে ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মার্কিন কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থান থেকে ক্রমেই সরে আসছেন। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে তারা স্বীকার করেছেন, ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ব্যাপারে অনেকটা নরম অবস্থান নিয়েছে। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, আমেরিকা চায় না ইরানের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞার কারণে তার মিত্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি কোনো কোনো দেশ ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে পারবে না।"

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গত মঙ্গলবার বলেছেন, যেসব দেশ ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা কমিয়ে দেবে তাদেরকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে। ইরানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ তেল ক্রয়কারী দেশ চীন, ভারত ও রাশিয়া এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা ইরানের তেল বিক্রির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানবে না। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারও তার দেশকে মার্কিন শাস্তির বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন কর্মকর্তা এখন এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, ইরানের তেল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয় এবং এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই তারা ইরানের কিছু কিছু তেল ক্রেতাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার শাস্তি তুলে নেয়া বা শিথিল করার কথা বলছেন। তবে আমেরিকা এখনো ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়ে আসছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো উদ্বেগ বিরাজ করছে এবং ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপের পরিণতির ব্যাপারেও অনেকে সতর্ক করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, "ইরানের তেল বিশ্ব বাজারকে স্থিতিশীল রেখেছে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হলে তেলের বাজারে চরম নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।"

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব সতর্কবার্তা থেকে বোঝা যায়, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে আমেরিকা যে দাবি করছে তা আসলে মিথ্যা। #   

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১   

 

ট্যাগ