ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর ৪০ বছর পূর্তিতে সর্বোচ্চ নেতার বাণী-২য় পর্ব
(last modified Wed, 10 Apr 2019 13:40:58 GMT )
এপ্রিল ১০, ২০১৯ ১৯:৪০ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার বাণীতে বলেছেন, ব্যাপক প্রতিকূলতা ও সমস্যা থাকা সত্বেও ইরান নানা ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষ্যে বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। বিপ্লবের পর গত ৪০ বছরে ইরান (অর্থনৈতিকসহ) নানা ক্ষেত্রে জিহাদের ডাক দিয়ে অভাবনীয় উন্নতি সাধান করেছে।

৪০ বছরে সব ক্ষেত্রে ইরানের উন্নতি ও পার্থক্যের দিকটা আরো পরিষ্কার বোঝা যাবে যদি ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব ও ভারতীয় বিপ্লবের সঙ্গে ইরানের তুলনা করা যায়। আমাদের ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে ঈমানের ভিত্তিতে এবং আমাদের বিশ্বাস বা শ্লোগান হচ্ছে "আমরাও পারি" যা কিনা ইমাম খোমেনি(র.) আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। তিনিই উচ্চতর মর্যাদা ও সব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির দিকে ইরানকে পৌঁছে দিয়েছেন। ইসলামি বিপ্লব ইরানে দীর্ঘদিনের অবক্ষয়ের অবসান ঘটিয়েছে। কেননা কাজার ও পাহলাভি রাজবংশের শাসনামলে ইরান একদিকে চরম অপমানজনক অবস্থানে ছিল অন্যদিকে সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর ইরান দ্রুত সমৃদ্ধি ও উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখে এবং প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ধর্মভিত্তিক ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেন, বিপ্লবী যুব সমাজ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় এবং "আমরাও পারি" এ শ্লোগান সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। আল্লাহর রহমতে শত্রুদের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আমরা সব ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। প্রথমত, বিপ্লবের পরপরই শত্রুর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ইরাকের সাদ্দাম সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা ও ইউরোপীয় মিত্রদের চাপিয়ে দেয়া আট বছরের যুদ্ধে আমাদের বিজয় ছিল বিস্ময়কর। দ্বিতীয়ত, বিপ্লবের পর অর্থনৈতিকসহ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে ধারা সূচীত হয়েছে তার দীর্ঘমেয়াদি ফল এখন আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। হাজার হাজার গবেষণা কেন্দ্র, হাজার হাজার অবকাঠামো নির্মাণ, যোগাযোগ, শিল্প, জ্বালানি, খনিজ, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়াও পরমাণু জ্বালানি চক্র, মৌলিক কোষ নিয়ে গবেষণা, ন্যানো প্রযুক্তি, তেল বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি ইসলামি বিপ্লবেরই ফসল।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সুষম উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরে বলেছেন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বিপ্লব পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে জোরদার হয়েছে, কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম আদর্শ হিসেবে দেশে এটির বাস্তবায়ন এখনো সন্তোষজনক নয়। এর অর্থ এ নয়  যে সুষময় উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো কাজ হয়নি।

বাস্তবতা হচ্ছে, বিপ্লবের পর গত ৪০ বছরে বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যে সাফল্য এসেছে তা অতুলনীয়। সাবেক স্বৈরশাসনামলে রাষ্ট্রীয় সেবামূলক কার্যক্রম কিংবা অর্থ উপার্জনের সুযোগ কেবল রাজধানী ও এর আশপাশের কিছু এলাকা এবং দেশের অন্য প্রান্তের সীমিত কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সুযোগ সুবিধা পাওয়ার সর্বশেষ তালিকায় দূরের শহর কিংবা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষকে রাখা হত। এরা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও প্রাথমিক বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধাও পেত না। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর সরকার দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সমানভাবে সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেয়। সড়ক নির্মাণ, সবার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা, কৃষি সুবিধা সম্প্রসারণ, বাধ নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুত, গ্যাস ও পানি সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইসলামি বিপ্লবের পর সমাজে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার বিস্তার ঘটেছে। বিপ্লবপূর্ব পাহলাভি শাসনামলে দুর্নীতি ও অবাধ স্বাধীনতা অবক্ষয় ডেকে এনেছিল এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি যুবক শ্রেণীকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী যুবকরা ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে ধর্ম ও ঐশী মূল্যবোধ আগের সমাজকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধসহ দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে যুবকরা জিহাদে শামিল হয় এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঘটনাবলীকে তারা আবারো সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পিতা-মাতা কিংবা স্ত্রীরা তাদের যেসব ঘনিষ্ঠ জনেরা যারা ধর্মীয় দায়িত্ব অনুভূতির কারণে যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের প্রতি মায়া ত্যাগ করেছিলেন। এমনকি স্বজনদের রক্তমাখা লাশ কিংবা আহতদেরকে দেখেও তারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। এ ছাড়া, মসজিদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও নজিরবিহীনভাবে আধ্যাত্মিকতার পরশে আলোকিত হয়ে ওঠে। যিয়ারত, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও এতেকাফে শামিল হওয়ার জন্য হাজার হাজার যুবকের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ অবস্থা এখন আরো বেশি বেগবান হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ দিন দিন জোরালো হচ্ছে। গত ৪০ বছরে আমরা শত্রুর কাছে মাথা নত করিনি এবং ইসলামি বিপ্লব ও এর আদর্শ রক্ষা এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ইরানের যুবকরা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সবসময়ই নিজেদের অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও নিজেরা টিকে থাকার জন্য অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং অন্যের স্বার্থকে পদদলিত করলেও তারা ইসলামি ইরানের মোকাবেলায় নিজেদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করেছে। ইরানের বিপ্লবী জনগণ প্রথমে এ জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী এবং এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান অনুচরকে (শাহ সরকারকে) উৎখাত করে এবং এরপর আজ পর্যন্ত ইরানে কোনো বলদর্পী শক্তির অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়নি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, সম্মানিত তরুণ সমাজ! এতক্ষণ যা কিছু বললাম তা গত ৪০ বছরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার অতি ক্ষুদ্র চিত্র। মহান ইসলামি বিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন তথা এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বভার এখন আপনাদের কাঁধে। ইসলামি বিপ্লবের পর নানা ক্ষেত্রে গত ৪০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের সুফল এখন আমাদের সামনে। স্বাধীনতা, শক্তিমত্বা, মর্যাদা, ধার্মিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞানে অগ্রগতি, নানা ক্ষেত্রে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন, আশাবাদী হয়ে  ওঠা, এ অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান প্রভাব, আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে ইরানের শক্তিশালী ও যৌক্তিক অবস্থান, জ্ঞানবিজ্ঞানে দ্রুত উন্নয়নে রেকর্ড গড়া এবং পরমাণু, মৌলিক কোষ, ন্যানো প্রযুক্তি, মহাকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইরান রেকর্ড গড়েছে। সামাজিক পরিসেবার ক্ষেত্রেও ইরান বিরাট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এসব কিছুই ইসলামি বিপ্লবের সুফল।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/

 

ট্যাগ