ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর ৪০ বছর পূর্তিতে সর্বোচ্চ নেতার বাণী-৩য় পর্ব
(last modified Tue, 23 Apr 2019 13:46:39 GMT )
এপ্রিল ২৩, ২০১৯ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, শক্তিশালী ইরান বিপ্লবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে। তবে এখন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ধরন পাল্টে গেছে।

বিপ্লবের পর ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দেয়া, তেহরানে ইসরাইলি দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া, গোয়েন্দাবৃত্তির আখড়া হিসেবে পরিচিত মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও প্রভৃতি ছিল মার্কিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ধরন। কিন্তু বর্তমানে ইসরাইলের সীমান্তে ইরানের শক্তিশালী উপস্থিতি, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার অবৈধ প্রভাব বিস্তার ঠেকানো, অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি মুজাহিদদের সংগ্রামের প্রতি ইরানের সমর্থন, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিরোধকামী সংগঠনের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে শত্রুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছে ইরান। বিপ্লবের পর আমেরিকা ভেবেছিল কিছু বিশ্বাসঘাতকের সহযোগিতায় কিংবা কিছু জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার দিয়ে ইরানি জাতি ও বিপ্লবী সরকারকে উৎখাত করা যাবে কিন্তু এখন ইরানকে সামরিক কিংবা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে গিয়ে তাদেরকে প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে বৃহৎ জোট গড়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও এসব করেও তারা ইরানের মোকাবেলায় পরাজিত হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইসলামি বিপ্লবের সুবাদে ইরানি জাতি আজ বহু বড় বড় বাধা বিপত্তি ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইরান এ পর্যন্ত যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছে তা ইসলামি বিপ্লবের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য গৌরবময় যাত্রার অতী ক্ষুদ্র একটি অংশ। তাই অত্যন্ত সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে যুবকদেরকে এ পথ পাড়ি দিতে হবে। তরুণ পরিচালকগণ, দায়িত্ব পালনকারীগণ, কর্মীবৃন্দ ও চিন্তাবিদগণকে আর্থ-রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং ইসলামি বিপ্লবের আদর্শ ধারণ করে জিহাদে অবতীর্ণ হতে হবে। সেই সাথে প্রিয় ইরানকে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ভবিষ্যত বিনির্মাণকারীদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তারা এমন এক দেশে বাস করে যে দেশটি নজিরবিহীন প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের অধিকারী। কিন্তু (বিপ্লবের আগে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির) তাবেদার সরকারের অলসতা ও উদাসীনতার কারণে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ হয় ব্যবহৃত হয়নি অথবা কম ব্যবহৃত হয়েছে। এখন তরুণ প্রজন্মের সাহসিকতা ও উদ্দীপনায় এসব সম্পদের সঠিক ব্যবহার হবে এবং তারা বাস্তবিক অর্থেই আধ্যাত্মিকতা ও বৈষয়িক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। দক্ষ মানবশক্তি, ঈমান ও দ্বীনদারি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আশা ভরসার জায়গা। জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ ৪০ বছরের নীচে যা আমাদের জন্য বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষক ও চিন্তাবিদ রয়েছে যারা দেশের জন্য অনেক বড় সম্পদ এবং বৈষয়িক কোনো কিছুর সঙ্গে তাদের তুলনা চলেনা।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তার বাণীতে আরো বলেছেন, সব কিছুর আগে আমার পরামর্শ হচ্ছে ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমাদেরকে আশাবাদী হতে হবে। এর অন্যথায় কোনো পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব নয়। আমি সব সময়ই লোক দেখানো মিথ্যা আশ্বাস দেয়া থেকে দূরে থেকেছি। আমি নিজে তো বটেই এবং অন্য সবাইকেও অর্থহীন হতাশা ও অযথা ভয়ভীতি থেকে দূরে রেখেছি এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। গত ৪০ বছর ধরে এবং এখনো শত্রুদের প্রচারণা নীতি বা কৌশল এবং বড় বড় পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের জনগণকে হতাশ করে দেয়া। এমনকি কর্মকর্তাদেরকেও ভবিষ্যতের ব্যাপারে নিরাশ করে তোলা তাদের উদ্দেশ্য। মিথ্যা খবর ও বিশ্লেষণ প্রচার, বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে তুলে ধরা, আশাবাদের জায়গাগুলোকে গোপন করা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল ত্রুটিগুলোকে বড় করে তুলে ধরা প্রভৃতি ইরানের বিরুদ্ধে শত্রুদের প্রচারণার অন্যতম কৌশল। তাই তরুণদের উচিত শত্রুদের এই প্রচারণা কৌশলকে ব্যর্থ করে দেয়া এবং নিজে ও অন্যদের মধ্যে ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশার আলো জাগিয়ে তোলা। ভয় ও হতাশাকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে। আর এটাই হবে তোমাদের জন্য প্রথম ও আসল জিহাদ।        

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, জ্ঞান একটি দেশের শক্তি ও মর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শুধু জ্ঞানবিজ্ঞানে অগ্রগতির কারণেই পাশ্চাত্যবিশ্ব যেমন সম্পদশালী হয়ে উঠেছে তেমনি ২০০ বছর ধরে তারা দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করছে এবং প্রভাব বিস্তার করে আছে। তাদের মধ্যে ধর্ম বিশ্বাস ও নীতি নৈতিকতার ঘাটতি থাকলেও (বিশ্বে) জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাশ্চাত্য স্টাইলের জীবন ধারা চাপিয়ে দিয়ে তারা সেখানকার আর্থ-রাজনৈতিক অঙ্গন নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমরা পাশ্চাত্যের মতো জ্ঞানবিজ্ঞানকে হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করার পরামর্শ দেব না। আল্লার কাছে শুকরিয়া জানাই ইরানিদের মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিভা বিশ্বের গড় প্রতিভার চেয়ে বেশি। গত দুই দশকে জ্ঞানবিজ্ঞানে আমরা যেভাবে দ্রুত এগিয়েছি তা বিশ্বের পর্যবেক্ষকদেরকে বিস্মিত করেছে। জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সাফল্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৬তম যা পর্যবেক্ষকদেরকে বিস্মিত করেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ইরান এ সাফল্য অর্জন করেছে। শত্রুদের বিরোধিতা সত্বেও আমরা বড় বড় রেকর্ড গড়েছি। এতবড় নেয়ামতের জন্য দিনরাত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, আমি বলতে চাই এ পর্যন্ত যা কিছু অর্জন করেছি তা কেবল শুরু মাত্র এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। জ্ঞানের শিখরে পৌঁছতে এখনো আমরা বহু পিছিয়ে এবং আমাদেরকে অবশ্যই সেই চূঁড়ায় পৌঁছতে হবে। আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি এবং শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। বিশ্বে যখন নতুন করে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তখন পাহলাভি ও কাজার শাসনামলে এ ক্ষেত্রে লজ্জাজনকভাবে পিছিয়ে পড়লেও আমরা এখন নতুন করে শুরু করেছি এবং এতো দ্রুত এগিয়ে যাব যাতে অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি। যুবকদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নয়নে তোমরা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নাও এবং একে জিহাদ হিসেবে গ্রহণ কর। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৩

ট্যাগ