ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর ৪০ বছর পূর্তিতে সর্বোচ্চ নেতার বাণী-৪র্থ পর্ব
(last modified Sat, 27 Apr 2019 12:08:09 GMT )
এপ্রিল ২৭, ২০১৯ ১৮:০৮ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, আধ্যাত্মিকতার অর্থ হচ্ছে ঐশী মূল্যবোধগুলোকে যেমন একনিষ্ঠতা, আত্মত্যাগ, আল্লাহর প্রতি ভরসা, ঈমান প্রভৃতি বিষয়গুলোকে নিজের মধ্যে লালন করা এবং তা সমাজে খুব গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা।

নৈতিকতার অর্থ হচ্ছে, পরোপকার, ক্ষমা, দরিদ্রকে সহায়তা করা, সত্যবাদী হওয়া, সাহসিকতা, ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া, আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রভৃতি। সমাজে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও নৈতিকতার যত বেশি বিস্তার ঘটবে তার বরকত বা কল্যাণ ততবেশী ছড়িয়ে পড়বে। নিঃসন্দেহে এর জন্য প্রয়োজন জিহাদি চেতনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। আর শাসক গোষ্ঠীর সহায়তা ছাড়া এ জিহাদ ও প্রচেষ্টা অর্থহীন। তবে এ ক্ষেত্রে কেবল নির্দেশ জারি করে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। কারণ সরকারকেও আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। আধুনিক প্রচার ব্যবস্থা নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত্রুদের বিষাক্ত প্রচারণা পবিত্র হৃদয়ের তরুণ শ্রেণীকে টার্গেট করেছে। এ অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাঁধে কঠিন দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

শক্তিশালী অর্থনীতির গুরুত্ব সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, অর্থনীতি নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করে। একটি শক্তিশালী অর্থনীতি বাইরের প্রভাব ও আধিপত্য মোকাবেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল অর্থনীতি শত্রুদের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়। দরিদ্রতা ও প্রাচুর্য মানুষের বস্তুবাদী ও আধ্যাত্মিক জীবনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ইসলামি সমাজের লক্ষ্য শুধু অর্থনীতি নয় কিন্তু শক্তিশালী অর্থনীতি ছাড়া আবার ইসলামি লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ইসলামি বিপ্লব আমাদেরকে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি সাবেক জালিম সরকারের দুর্নীতি ও পরনির্ভরতা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। কিন্তু দুর্বল কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এসব সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন অর্থনৈতিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। সারা দেশের সম্মানিত তরুণ শ্রেণীর এটা জেনে রাখা উচিত সব সমস্যার সমাধান দেশের ভেতরেই রয়েছে। যারা মনে করে বাইরের নিষেধাজ্ঞা এবং শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ না করার কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সুতরাং তাদের কাছে নতজানু হওয়ার মধ্যেই সমস্যার সমাধান রয়েছে-এ ধরনের চিন্তা ক্ষমার অযোগ্য ভুল।        

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এ দুটি একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বের অন্য দেশ বিশেষ করে জালিম শাসকরা যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ তাদের তুলনায় ইসলামি ইরান সরকারের অধিকাংশ কর্মচারীরা দুর্নীতিবাজ নয় এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ইরানের কর্মকর্তারা নৈতিকতাগুণ সম্পন্ন। কিন্তু তারপরও বর্তমান অবস্থাটাও সন্তোষজনক নয়। (অর্থাৎ আরো বেশি সৎ আদর্শ ও নীতিবান হতে হবে)। সবার এটা জেনে রাখা উচিত একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ অর্থনীতির জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বৈধতা জরুরি। প্রত্যেকের উচিত শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে হারাম খাদ্য থেকে দূরে থাকা এবং এ জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। সরকারের সকল বিভাগকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ঈমানদার, জিহাদি চেতনা ও পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। তবেই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সব নবী রাসুলের প্রধান লক্ষ্য ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য উদ্দেশ্যও একই। সব যুগে ও সব সমাজেই এর আবেদন রয়েছে। ইরানও এ ক্ষেত্রে বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেছেন, একটি জাতির স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, তাদের মুক্তি এবং বিশ্বের আধিপত্যকামী ও বলদর্পী শক্তির প্রভাবমুক্ত সরকার। সামাজিক স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ও তা বাস্তবায়ন এবং সব সমাজের মানুষের জন্য চিন্তার স্বাধীনতা। এ দু'টি বিষয় ইসলামি শিক্ষার অতী গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া মানুষের জন্য বিরাট নেয়ামত। এসব কোনো সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের জন্য অনুগ্রহ নয়। সরকারের দায়িত্ব কেবল মানুষের জন্য এসব ঐশী নেয়ামত ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব বা মর্যাদার বিষয়টি কেবল তারাই ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবে যারা এর জন্য সংগ্রাম করেছে, যুদ্ধ করেছে। ইরানি জাতি গত ৪০ বছর ধরে এজন্য সংগ্রাম করে আসছে। ইরানে যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রয়েছে তা সাহসী ও আত্মত্যাগী লাখ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিশ্ব অঙ্গনে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু ঘটনা ঘটে গেছে এবং কিছু ঘটনা ঘটবে। আমেরিকা ও ইসরাইলের মোকাবেলায় ইসলামি প্রতিরোধ শক্তির আবির্ভাব, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার পরাজয়, এ অঞ্চলে তাদের সহযোগী দেশগুলোর অচলাবস্থা, পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং আধিপত্যকামীদের মধ্যে এর প্রভাবের কথা উল্লেখ করা যায়। এসবই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মর্যাদার কিছু অংশ যা কিনা কর্মকর্তাদের সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও জিহাদি চেতনা ছাড়া অর্জন করা সম্ভব হত না। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কর্মকর্তারা এজন্য চিন্তিত যে তারা জানে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রস্তাব বা কথাবার্তাগুলো মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ। ইরানি জাতি আজ শুধু যে আমেরিকাকে অপরাধী মনে করে তাই নয় একই সঙ্গে ইউরোপের কোনো কোনো দেশকেও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না। তাই ইরানের উচিত তাদের ব্যাপারে সীমারেখা মেনে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে চলা এবং নিজেদের জাতীয় ও বিপ্লবী মূল্যবোধ রক্ষার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া। তাদের মিথ্যা হুমকিতে ভয় না পেয়ে বরং সব ক্ষেত্রে দেশের সম্মান রক্ষা করে চলা উচিত। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে আধ্যাত্মিকতা ও বস্তুগত ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কিছু বলার আছে। তবে এটুকু বলতে চাই ইরানে পাশ্চাত্য ধাঁচের জীবনযাপন পদ্ধতি চালু করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা আমাদের নৈতিকতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে। তাই এর মোকাবেলায় সর্বাত্মক জিহাদ ও দূরদর্শিতার প্রয়োজন রয়েছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন

 

ট্যাগ