তেলকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না: ইরান
ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জাঙ্গানে মার্কিন নিউজ চ্যানেল সিএনবিসি’কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তেল উত্তোলন, রপ্তানি ও সর্বোপরি বিশ্বের তেলের বাজার নিয়ে রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ভিয়েনায় তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের ১৭৬তম সম্মেলনের অবকাশে ওই সাক্ষাৎকার দেন।
ইরান গত ১০০ বছরে বিশ্বের তেলের বাজারকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করেছে জানিয়ে জাঙ্গানে বলেন, ওপেককে একটি রাজনৈতিক সংস্থায় পরিণত করার অর্থ হবে বিশ্ববাজারে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। তিনি বলেন, এ কারণেই ইরান তেলের রাজনীতিকরণের ঘোর বিরোধী।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এমন সময় ওপেকের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো যখন এই সংস্থার কিছু দেশের অন্যায় আচরণের কারণে ওপেকের ভবিষ্যত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। যেদিন থেকে আমেরিকা তেলকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে সেদিন থেকে রপ্তানি ও আমদানিকারক দেশগুলো তেলের দামের ওপর তেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমেরিকা ইরানের তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রথমত, ইরানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তেহরানের ওপর এতটা চাপ সৃষ্টি করা যাতে দেশটি আমেরিকার শর্ত মেনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আবার পরমাণু আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। এ কাজে আমেরিকার দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে- আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, মার্কিন সরকার এশিয়া মহাদেশের বাজারে ইরানের তেলের ঘাটতি মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পূরণ করতে চায়। এ সম্পর্কে আরবি ভাষার বার্তা সংস্থা আল-আরাবি আল-জাদিদ জানিয়েছে, আমেরিকা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনায় এ বিষয়টিকে ব্যবহার করতে চায়। চীন ইরানি তেলের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। চীনকে ইরানি তেল কিনতে বাধা দিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বেইজিংকে তেল সরবরাহ করতে চায় ওয়াশিংটন। একই কথা ইরানি তেলের অন্যতম ক্রেতা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে ইরানের তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরানি তেলের ক্রেতাদের জন্য মারাত্মক সমস্যা তৈরি করেছেন। মার্কিন তেল বিশেষজ্ঞ স্কট মোডিল এ সম্পর্কে বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইরানি তেলের এশীয় ক্রেতারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে। একটি দেশের একক সিদ্ধান্তে এভাবে বিশ্ব বাজারে তেলের আমদানি ও রপ্তানিতে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করা অব্যাহত থাকলে ওপেকের মতো বিশ্ব সংস্থার পতন ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/মো. মুজাহিদুল ইসলাম/৩