জানুয়ারি ০৩, ২০২০ ১৮:৪০ Asia/Dhaka
  • ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার: আলোচনার মাধ্যমে ব্যবহারের পরামর্শ

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা সমর্থন জানালেও আপত্তি জানিয়েছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি।

ইভিএম বিরোধীদের আশঙ্কা, এটি ব্যবহার করে ডিজিটাল কারচুপি হবে। যদিও নির্বাচন কমিশনের দাবি, কারচুপি বন্ধেই ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাক করার কোন সুযোগ না থাকলেও ইভিএমে কারচুপির সুযোগ একেবারেই নেই, এমনটা নয়। আঙ্গুলের ছাপ জটিলতায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কারচুপির অংশ হতে পারেন। আবার ইভিএমে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করেও ভোটের ফল পাল্টে দেয়া সম্ভব। আর এসব কারণে ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে।

ইভিএম নিয়ে শুরু থেকে বিতর্ক থাকলেও এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেনি নির্বাচন কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির সংলাপে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। তখন বিএনপিসহ ১২টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়। আর আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল ইভিএমের পক্ষে ছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন ইভিএম নিয়ে মতৈক্য হয়নি, তেমনি ভোটারদের বেশির ভাগ এখন পর্যন্ত ইভিএমের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত নন। এছাড়া ভোটার ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও আছে। যা এত অল্প সময়ে সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর কারিগরি কমিটি ইভিএমে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি যুক্ত করার সুপারিশ করলেও তা আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন।

এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ভোটাররা। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সময় মতো ভোটগ্রহণ শুরু করতে না পারা, ভোটদানে সময়ক্ষেপন, প্রত্যাশিত সময়ে ফলাফল প্রদান করতে না পারার অভিযোগ আছে।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাই ইভিএমের উন্নয়নে বিএনপির কোন পরামর্শ থাকলে সেটা তারা দিতে পারে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তারাই বিজয়ী হবে। এ অবস্থায় বিতর্ক না করে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাদের পরামর্শগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনকেও রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে। জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আর সেটা করা গেলে, নতুন বছরে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে।

নির্বাচনকে ঘিরে সব দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে মাঠে নেমেছে। রাজনৈতিক দল, ভোটারসহ সব মহলে আশা ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা ধরে রেখে শেষ সময় পর্যন্ত সবাই নির্বাচনের মাঠে থাকবেন, সেই প্রত্যাশাও জানান তিনি।

বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহার শুরু করেছিল শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ২০১২ সালে প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ মোট ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ। তবে ইভিএমের ছয়টি আসনে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৬০০ বা তার বেশি ভোটকক্ষ থাকবে। দুই সিটির নির্বাচনে ৩৫ হাজারের মতো ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দুজন করে সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ভোটারদের প্রশিক্ষিত করতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, লিফলেট, বুকলেট ও টিভি বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে। ভোটের আগে ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি প্রতিটি কেন্দ্র ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইভিএমে ভোট নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ২৮ জানুয়ারি চূড়ান্ত মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে।#

পার্সটুডে/শামস মণ্ডল/রেজওয়ান হোসেন/৩

 

ট্যাগ