পরমাণু সমঝেতা পুরোপুরি মেনে চলতে ইরানের প্রতি ইউরোপের আহ্বান
ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ অর্থাৎ জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু আমেরিকা এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটিকে রক্ষায় আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে সর্বশেষ অবস্থান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও এ সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্রাসেলসে এক বৈঠকে ইউরোপের তিনটি দেশ পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়া এবং ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।
২০১৮ সালের ৮মে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত তারা সে প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেনি। কিন্তু তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতায় দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতির ওপর অটল রয়েছে বলে দাবি করেছে।
ইরানকে সুবিধা দিতে ইউরোপ তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৯ সালের মে থেকে ইরান পাঁচ দফায় পরমাণু সমঝোতায় দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে। কিন্তু ইউরোপ ইরানের এ পদক্ষেপকে পরমাণু সমঝোতার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে কাল বিলম্ব না করে ইরানকে এ পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগে স্বীকার করেছিল ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি মেনে চলছে। ইউরোপের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এ ব্যাপারে বলেছেন, 'আমেরিকা একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও ইরান তার প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে এবং আমরা চাই তেহরান এ অবস্থান ধরে রাখুক যাতে চুক্তিটি টিকে থাকে। কারণ ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যই এটি টিকে থাকা দরকার।'
এ অবস্থায় যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিশ্রুতিও পালন করেনি সেখানে তারা কিভাবে ইরানকে পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলার দাবি জানাতে পারে সেটাই বড় প্রশ্ন। আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপের অবস্থান থেকে বোঝা যায় ইরানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তাদের আসলে কোনো স্বাধীনতাই নেই। এমনকি ইরানকে পরমাণু সমঝোতায় ফিরিয়ে আনতে তারা ১৪ জানুয়ারি থেকে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে।
প্রকৃতপক্ষে, ইরান তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিনিময়ে পরমাণু সমঝোতা মেনে নিয়েছিল এবং এ সমঝোতার ফলে দেশটির ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে বলে তেহরান আশা করেছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও তারা এ ব্যাপারে কোনো চেষ্টা করেনি।
এ অবস্থায় ইউরোপ যদি সত্যিই চেয়ে থাকে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পালন করুক তাহলে তাদেরকেও ইন্সটেক্স ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ নিতে হবে যেখানে ইরানের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২