আইএমএফের ঋণ আটকে দেয়ার কোনো অধিকার আমেরিকার নেই: ইরান
মার্কিন বেআইনি নিষেধাজ্ঞা এবং করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এ পর্যন্ত বহু ইরানি নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
ইরান সরকারের মুখপাত্র আলী রাবিয়ি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের পক্ষ থেকে ইরানকে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে মার্কিন বিরোধিতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আইএমএফের ঋণ আটকে দেয়ার কোনো অধিকার আমেরিকার নেই। তিনি তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইরান বহু বছর ধরে আইএমএফের সদস্য হিসেবে এটিকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করেছে; কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির আগে কখনো এই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ চায়নি তেহরান।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ৪১ বছর পার হতে চলল। আমেরিকা প্রথম থেকেই ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। বিদেশে ইরানের অর্থ সম্পদ জব্দ করা এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে আমেরিকা ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি গ্রহণ করেছে। ১৯৭৯ সালের ১৪ নভেম্বর তেহরানে গুপ্তচর বৃত্তির আখড়া হিসেবে খ্যাত মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও এর পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সেদেশে ইরানের সমস্ত অর্থ-সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেন। তার ওই ঘোষণার পর মার্কিন সরকার ১৯৮০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের যাত্রা শুরু করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে জোর জবরদস্তিমূলকভাবে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেজ্ঞার পরিধি বাড়তে থাকে।
১৯৮৪ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর আমেরিকা এ ঘটনার জন্য সরাসরি ইরানকে অভিযুক্ত করে এবং এ অজুহাতে তারা ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার তালিকা দীর্ঘায়িত করে। এরপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সন্ত্রাসীদের সমর্থকদের যাবতীয় অর্থ-সম্পদ জব্দ করার অনুমতি দিয়ে বিশেষ আইন পাশ করে ইরানকেও সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতা অর্জিত হয় এবং এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু দুই বছর যেতে না যেতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান এবং ফের ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতেও আমেরিকা ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি করতে পারছে না। এমনকি আইএমএফ'র দেয়া অর্থ সাহায্যও আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন যা খুবই অমানবিক। ইরানের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ফাওয়াদ ইযাদি ইরানের জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ থেকে বোঝা যায় আমেরিকা ইরানের জনগণের শুভাকাঙ্ক্ষিতো নয় তারা যেকোনো পন্থায় এমনকি করোনাকেও তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যার ফলে প্রাণ হারাচ্ছে ইরানের মানুষ। এ থেকে বোঝা যায় মার্কিন কর্মকর্তারা মানবিকতার ধার ধারে না।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৪