ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাবুল সফর: বর্তমান পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি দল আফগানিস্তান সফরে গেছেন। আরাকচি আফগান উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মির ওয়াইজ নব'র সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন। আরাকচি আফগান উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুল্লাহ মোহাব এবং জাতীয় শান্তি কমিটির প্রধান আব্দুল্লা আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।
দীর্ঘ মেয়াদে দিপক্ষীয় সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়া, দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার এবং আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার শান্তি আলোচনার বিষয়টি তাদের বৈঠকে গুরুত্ব পায়। দু'দেশের জাতীয় স্বার্থে এ সংক্রান্ত সমঝোতা বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি দোহায় অনুষ্ঠিত আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার শান্তি আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এটা আফগানদের মধ্যকার আলোচনা প্রক্রিয়া। তাই এখানে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
প্রকৃতপক্ষে, ইরান দীর্ঘ দিন ধরে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত ওই দেশটিতে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এ কারণে গত অক্টোবরে ইরানে আফগান জাতীয় শান্তি কমিটির প্রধান আব্দুল্লা আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে সেদেশের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ইরানের সংসদ মজলিশে শুরায়ে ইসলামির প্রধান মোহাম্মদ বাকের কলিবফের সঙ্গে সাক্ষাতে তার দেশের প্রতি ইরানের সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেছিলেন, গত চার দশক ধরে ইরান সবসময়ই আফগান জনগণের পাশে রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, ইরান মনে করে আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক দল ও গ্রুপের অংশগ্রহনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, আফগানিস্তানে বিদেশী সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি। প্রায় দুই দশক ধরে মার্কিন দখলদারিত্ব ও সামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপ এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারবে না। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আফগানদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সব দলের মধ্যে বোঝাপড়া ও পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ করতে হবে।
তেহরান এমন সময় আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে যখন ইরান ওই দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ইরানের চবাহার সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে ভারত মহাসাগরসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে দুদেশের মধ্যে সম্প্রতি সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তার আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখবে। সে কারণে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাবুল সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩