সোলাইমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ পাল্টে গেছে
(last modified Sat, 02 Jan 2021 10:38:00 GMT )
জানুয়ারি ০২, ২০২১ ১৬:৩৮ Asia/Dhaka
  • কাসেম সোলাইমানি এবং আবু মাহদি আল মোহান্দেস
    কাসেম সোলাইমানি এবং আবু মাহদি আল মোহান্দেস

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির কুদস ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি গত বছরের ৩ জানুয়ারি শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমান বন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় শহীদ হয়েছিলেন। তার সঙ্গে থাকা ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ শাবির উপপ্রধান আবু মাহদি আল মোহান্দেসসহ আরও আটজন শহীদ হন।

জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাত বার্ষিকীর প্রাক্কালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সোলাইমানিকে হত্যা করার মাধ্যমে আমেরিকার প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছে, আমরা এ অঞ্চলে শান্তির জন্য একজন সত্যিকারের সংগ্রামী যোদ্ধাকে হারিয়েছি। বোন সম্মেলনকে কাজে লাগানো থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দানে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন জেনারেল সোলাইমানি। এভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিরাট ভূমিকা রেখেছেন।

বাস্তবতা হচ্ছে, জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছে এবং অনেক বড় ভুল করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো এ অঞ্চলে তাদের ষড়যন্ত্র ও নানা অপরাধযজ্ঞ ঢাকার জন্য নতুন নতুন সংকট সৃষ্টিতে ব্যস্ত। কিন্তু এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামরিক হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। মার্কিন সন্ত্রাসীদের এ অঞ্চলে আর কোনও জায়গা নেই। আমেরিকার যুদ্ধ বিরোধী সংগঠনের সদস্য জো লুম্বারদো ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস তৈরির পেছনে আমেরিকার অতীত ও বর্তমান সরকারের অভিন্ন ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন দশকের পর দশক ধরে মার্কিন সরকার সন্ত্রাসীদেরকে সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এসেছে। আফগানিস্তানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আইএস সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পথে। এ অবস্থায় দেশটির নতুন সরকার এ অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টির নীতিতে অটল থাকবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শয়তানি পরিকল্পনা ও সন্দেহজনক নানা তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যেকোনো হঠকারিতার জন্য ওয়াশিংটন দায়ী থাকবে। মার্কিন সামরিক বাহিনী সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে এবং ওমান সাগরে ব্যাপক উস্কানিমূলক তৎপরতা চালিয়েছে। এ অঞ্চলে উন্নতমানের এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পাশাপাশি আমেরিকা দীর্ঘপাল্লার বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠিয়ে নানামুখী উসকানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে।

এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভূমিকা পালনকারী জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র যে অপরাধ করেছে ইতিহাস থেকে তা কখনো মুছে যাবে না এবং ইরানের জনগণও বিষয়টিকে কখনো ভুলে যাবেনা। এ অবস্থায় মার্কিন কর্মকর্তারা যদি অতীত ভুলের পুনরাবৃত্তি করা থেকে সরে আসে তাহলে এটা তাদের জন্যই মঙ্গলজনক হবে কেননা তাদের এ ধরনের অপরাধের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে ইরান।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২

 

ট্যাগ