এপ্রিল ১৮, ২০২১ ১৬:৪৬ Asia/Dhaka

পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের বৈঠকের পর ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির আলোচক দলের প্রধান সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, সমস্যা সমাধানে নতুন সমঝোতায় উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই আলোচনা ক্ষয়িষ্ণু বা অর্থহীন ও দীর্ঘায়িত যেন না হয়।

ভিয়েনায় যৌথ কমিশনের কয়েক দফা বৈঠকের পর ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং পরমাণু সমঝোতা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য দুটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে পরমাণু সমঝোতার ভবিষ্যত স্পষ্ট হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানকে সর্বনিম্ন সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে অর্থাৎ অতি সামান্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ইরানের কাছ থেকে পুরো সুবিধা আদায় করে নেয়া চেষ্টা করছে।

পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনটি অপশনের কথা জানিয়েছে। এক. নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারযোগ্য, দুই. আলোচনাযোগ্য ও তিন. নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অযোগ্য। তবে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে যেকোনো সমঝোতায় পৌঁছার জন্য কেবলমাত্র প্রথমটির ওপর জোর দিয়েছেন। গণমাধ্যমগুলো আরো বলছে, মার্কিন সরকার সব নিষেধাজ্ঞা একবারে তুলে নিতে চায় না এবং তেহরান যদি মার্কিন দাবি অনুযায়ী ছাড় দেয় তাহলেই কেবল নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। ওয়াশিংটন হুমকি দিয়ে বলেছে, ইরান যদি সব নিষেধাজ্ঞা একবারে তুলে নেয়ার দাবিতে অটল থাকে তাহলে পরমাণু সংক্রান্ত আলোচনা অচলাবস্থার সম্মুখীন হবে।    

কিন্তু ইরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞাকে তিনভাগে ভাগ করার মার্কিন পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় এবং সমস্ত নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই একবারে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ ব্যাপারে ইরানের অকাট্য নীতি হচ্ছে পরমাণু সমঝোতার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে একবারে সব তুলে নিতে হবে। এরপর সত্যিকারভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরই ইরানও পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করবে। তেহরান মনে করে একবারে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার মাধ্যমেই কেবল ভিয়েনা আলোচনা টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে দেয়া সাক্ষাতে বলেছেন, ২০১৫ সালের পর থেকে যত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার সবই তুলে নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফও টুইটবার্তায় বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে যত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সব একবারে তুলে নিতে হবে। তিনি ট্রাম্পের আরোপীত নিষেধাজ্ঞাকে অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছু না বলে পরমাণু সমঝোতায় ওয়াশিংটনকে ফিরিয়ে আনার জন্য উল্টো ইরানের ওপর কিছু শর্ত চাপিয়ে দিয়েছেন। বাইডেন দাবি করেছেন তেহরান যদি পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলে তাহলে ওয়াশিংটনও এ চুক্তিতে ফেরত আসবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসনের ধারনা কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে কিংবা সীমিত কিছু সুবিধা দিয়ে পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়নে ইরানকে রাজি করানো যাবে। কিন্তু ইরান পরমাণু কার্যক্রমকে তো সীমিত করেনি বরং ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করেছে। #     

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৮

ট্যাগ