২০২১ সালের শেষ চিঠিতে রেডিও তেহরান সম্পর্কে এক শ্রোতার মূল্যায়ন
মহাশয়, সৃষ্টির অপরিহার্য ও অলংঘনীয় নিয়মে এবং মহাকালের আবর্তনে দিন, মাস, বর্ষ ও শতাব্দীর পরিক্রমা। তাই পুরাতন বছরের অস্তিত্ব আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে। দুই বছরের ক্রান্তিলগ্নে এসে পেছনে ফেলে আসা অতীতকে আজ দারুণভাবে মনে পড়ছে ও আগামী নতুন বছর আমাদের কেমন কাটবে সেই নিয়েও দারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি।
ফেলে আসা বছরে নানা রোগ ব্যাধি ও সারা বিশ্বব্যাপী করোনার আবহে মানুষ যেভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে তাতে আমি আশা করি নতুন বছর আমাদের জন্য বইয়ে আনবে করোনা মুক্ত, রোগ-ব্যাধি মুক্ত এক সুন্দর বিশ্ব। যেখানে আমরা সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও রংধনুর সাত রঙের আভায় আলোকিত মন নিয়ে পরস্পর ভাই-ভাই হিসেবে বাস করতে পারব।
২০২১ সালে রেডিও তেহরান-এর অনুষ্ঠান শুনে পাওয়া না পাওয়ার এক খতিয়ান তুলে ধরার উদ্দেশ্য এ বছরের শেষ ইমেইলটি লেখার চেষ্টা করছি। আশা করি সবাই সাদরে গ্রহণ করবেন।
আমি রেডিও তেহরান-এর জন্ম লগ্নের শ্রোতা হলেও সাংসারিক ঝামেলায় মাঝে কিছু দিন অনুষ্ঠান শুনে মতামত পাঠানো থেকে বিরত ছিলাম। আমার ছন্দ পতনের পর হঠাৎ একদিন পশ্চিম বঙ্গের শ্রোতা বন্ধু, বন্ধুবর নাজিম উদ্দিন ভাই-এর অনুরোধে আবারও বেতার জীবনে ফিরে এলাম, আবার লেখা শুরু করলাম। সেটা ২০২১ সালের জুলাই মাসের কথা। ফেসবুকে প্রিয়জন গ্রুপে যোগদান করে আবার অনুষ্ঠান শুনে মতামত দিতে শুরু করলাম। সে সময়ে আমি ইমেইল পাঠানো শিখিনি। পরে এক বন্ধুর নিকট থেকে ইমেইল পাঠানো শিখে অনুষ্ঠান শুনে আমার অনুভব এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করলাম। প্রথম ইমেইল পাঠালাম ২৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে। সেই থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে মতামত জানিয়ে আসছি নিয়মিতভাবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। ওই সময় পর্যন্ত রেডিও তেহরান-এর প্রতি আমার ভালোবাসা ও ভালোলাগার এবং চাওয়া-পাওয়ার এক অনুভবের খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করছি এই মেইলে।
গত পাঁচ/ছয় মাসে আমি রেডিও তেহরানে ইমেইল এ মতামত পাঠিয়েছি ১২৩ টি, রিসিপশন রিপোর্ট পাঠিয়েছি ৬টি এবং প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান শুনে তাৎক্ষণিক মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি অসংখ্য। শ্রোতা বন্ধুরা ফেসবুক লাইভ খুললেই তা বুঝতে পারবেন। সে সাথে রেডিও তেহরান ও প্রিয়জন গ্রুপে সদা সক্রিয় হয়ে থেকেছি।
বিগত পাঁচ ছয় মাসে আমার প্রিয় বেতার থেকে আমি কী পেলাম সেটা বলতে গেলে দেওয়ার চেয়ে পেয়েছি অনেক অনেকগুণ বেশি। গত পাঁচ/ছয় মাসে প্রত্যেকটি প্রিয়জন অনুষ্ঠানে আমার চিঠির উত্তর পেয়েছি। হিসাব করলে দাঁড়াবে ২৬ সপ্তাহে ২৬টি চিঠির উত্তর পেয়েছি। রেডিও তেহরান-এর বাংলা অনুষ্ঠান-এর ওয়েবসাইট পার্সটুডেতে প্রকাশিত হয়েছে ২১টি চিঠি, নভেম্বর মাসের শ্রেষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে ঘোষিত হয়ছি, E-QSL Card পেয়েছি দুটি যা আমার জীবনের চরম প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি। তাই এই সুযোগে রেডিও তেহরানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তাছাড়া সবার সাথে যা পেয়েছি তা উল্লেখ না করলেই নয়। তা হলো প্রতিদিন নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ, তরতাজা বাস্তব তথ্যভিত্তিক বিশ্ব সংবাদ, বিশ্বের চলমান ঘটনা প্রবাহের বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান দৃষ্টিপাত, সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকথা, শ্রোতাদের প্রিয় অনুষ্ঠান প্রিয়জন, রংধনু আসর, আদর্শ মানুষ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হবার জন্য আদর্শ মানুষ গড়ার কৌশল, ভ্রাতৃঘাতি ও চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের জন্য ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস, ইরান ভ্রমণ, পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা যা আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে এবং অনেক অজানা তথ্যের ভাণ্ডার আমার সম্মুখে উন্মোচন করেছে। তদুপরি একজন আল্লাহভক্ত খোদাভীরু মুসলমান বানাতে বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয়, কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক আলোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষ অনুষ্ঠানসমূহ আমাকে দারুণভাবে সহায়তা ও পাথেয় যুগিয়েছে। রেডিও তেহরান-এর কোন্ অবদানের কথা অস্বীকার করি, সবই আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে হয়। সবই জীবনঘনিষ্ঠ হিসেবে আঁকড়ে ধরেছি।
নতুন বছরেও রেডিও তেহরান আমাদের পাশে থাকবে নিরন্তর এবং আমাদের কন্টকাকীর্ণ পৃথিবীতে সুপথ দেখিয়ে পথচলা সুচল করবে এই আহ্বান জানিয়ে এবছরের শেষ চিঠির যবনিকা টানছি। শেষে সবাইকে নববর্ষের প্রীতি ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ আর সুখ ও সমৃদ্ধি এই কামনা করছি।
ধন্যবাদান্তে,
আব্দুস সালাম সিদ্দিক,
সভাপতি, সকাল-সন্ধ্যা রেডিও লিসেনার্স ক্লাব,
কান্দুলিয়া, বড়পেটা, আসাম, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।