জুলাই ০২, ২০২২ ১২:০৭ Asia/Dhaka
  • রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠানমালা: শ্রোতা হিসেবে মূল্যায়ন

ড. মির শাহ আলম: খোলাফায়ে রাশেদিনের নেতৃত্বের প্রায় দেড় হাজার বছর পর পৃথিবীতে ইসলাম আবার বিজয়ী হয়, পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে বিজয়ী করার একটি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু হয় পারস্য উপসাগর ঘেঁষা ইরান থেকে। পৃথিবীতে অনেকগুলি মাজহাবের অবস্থান থাকলেও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে বিজয়ী করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা সফল হয় ইরানেই।

ছাত্রাবস্থায় আমি তখন (১৯৭৮) পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলো থেকেই ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে অবগত হই। মজলুম বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর রঙিন ছবি সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রিয় মানুষের মতো আমাকেও আর্কষণ করছে। তখন ইসলামি বিপ্লবী প্রচারণায় অংশ হিসেবে আমি এই ছবিটি ব্যবহার করতাম। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ময়মনসিংহের ইরানি কালচার সেন্টার তত্ত্বাবধান (১৯৮৩) করি। ছবি, বিভিন্ন ধরনের বিপ্লবী বই, নিউজলেটার বিলির মাধ্যমে বিপ্লব-এর স্বপক্ষে প্রচারণায় ব্যবহার করি এবং জনমত সংগঠনের চেষ্টা করি। বর্তমানে আমি ইসলামী বিপ্লবের বিভিন্ন প্রচার-প্রসারে বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা সংগঠন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ-এর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি।

একটি শক্তিশালী পরাশক্তির বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে প্রায় তিন যুগ নির্বাসনে থাকা ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয় ইরানে।

ইরানের সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত ও ভীতিকর প্রতিষ্ঠান সাভাক বাহিনীর বিরুদ্ধে ইসলামের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে আলেমদের নেতৃত্বে ইরানের বিপ্লবী জনসাধারণ প্রায় তিনযুগব্যাপী যে প্রবল আন্দোলন, বিপ্লব শুরু করেছিল- আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে ইহুদী চক্রান্ত, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে তা সফল হয়। নিন্দুকেরা প্রথমে বলেছিল এটা বিপ্লব নয়। তারপর বলেছে এর দ্বারা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না। সেইসাথে বলছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা নড়বড়ে অথবা টিকবে না। কিন্তু ইহুদি, নাসারা, বেঈমান, অমুসলিম সকল শক্তি ও পরাশক্তিকে ব্যর্থ প্রমাণিত করেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লব।

ইরান থেকে ইসলামের এই সমস্ত সত্যের আলো যখন উদগীরিত হচ্ছে তখনই ইসলামবিরোধীরা এর বিরোধিতায় বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা হচ্ছে। বিপ্লব সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার ফলে বিপ্লবী প্রশাসন আশির দশকের শুরুতে রেডিও তেহরান একটি অডিও প্রচারণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যা পশ্চিমা মিডিয়া বিশেষ করে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, সিএনএনসহ অন্যান্য মিডিয়ার অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে শুরু করে। বিপ্লবের এই সম্প্রচার উইং বিপ্লবের ইতিহাস, প্রয়োজনীয়তা, বিপ্লবে শহীদদের জীবনকাহিনী, এই প্রজন্মের নিকট সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের কাহিনি তুলে ধরার পাশাপাশি মজলুম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কূটনীতি ও আমাদের কোমলমতি শিশুদের সুন্দর ইসলামী জীবন গঠনে, ইহলৌকিক জীবন পরিশেষে জান্নাতি জীবনে প্রবেশে, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠন বিষয়ে রেডিও তেহরান যাবতীয় তথ্য উপাত্ত প্রচার করে থাকে।

রেডিও তেহরান প্রতিদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই সুমধুর কণ্ঠে সুললিত কোরআন তেলাওয়াত প্রচার করে থাকে। যা হৃদয়কে স্পর্শ করে, মনকে সতেজ করে এবং মানুষকে করে খোদাভক্ত।

আসমাউল হুসনা রেডিও তেহরানের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। মানুষ এবং পশুর মধ্যে মূল যেই পার্থক্য তা হলো বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান। এটা পশুর মধ্যে নাই। তাই মানুষকে তার পশুত্ব পরিত্যাগ করে বিবেককে মানবিক, আদর্শিক ও মহৎ করা যায় এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে।  চিঠিপত্রের আসর প্রিয়জন: প্রত্যেক মানুষের বাক স্বাধীনতা আছে। পৃথিবীর সব দেশের মানুষ চিঠি লিখতে পারে এবং তার উত্তরও এখানে দেয়া হয়। সত্য প্রকাশের এই অনন্য উদাহরণ

স্বাস্থ্যকথা অনুষ্ঠানে সকল ধরনের স্বাস্থ্য বার্তা দেয়া হয়। এতে রয়েছে শিক্ষণীয় অনেক কিছু। স্বাস্থ্য সংরক্ষণে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা জানা যায়। আমাদের দেশের শ্রোতারা অনেক উপকৃত হয়।

ছোটমণিদের অনুষ্ঠান রংধনু আসর। আজকের শিশু আগামী দিনের পিতা, দেশের নাগরিক, আগামীর নেতৃত্ব, দেশের প্রশাসক। শিশুকে আদর্শিকভাবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন তার মন ও মগজে আদর্শিক নাড়া দেওয়া। রেডিও তেহরান সেভাবেই পরিকল্পনা করে রঙিন অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। বাংলাদেশে রয়েছে অগণিত শিশু শ্রোতা।

ইসলামিক ইরানের সাথে পাশ্চাত্য জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছেএই পার্থক্যটি সত্য এবং মিথ্যার, এই পার্থক্যটি আলো এবং অন্ধকারের, এই পার্থক্যটি ভালো এবং মন্দের। এই পার্থক্যটি সুন্দর এবং অসুন্দরের, এই পার্থক্যটি শান্তি এবং অশান্তির, এই পার্থক্যটি মার্জিত এবং প্রতারণার। সর্বশেষ মূল্যবোধ এবং অবক্ষয়ের। পাশ্চাত্য জীবন ব্যবস্থা যে অবক্ষয়ের মধ্যে যাচ্ছে যে অশান্তির মধ্যে নিপাতিত, রেডিও তেহরান শ্রোতা হিসেবে আমি তার প্রমাণ। 

বর্তমানে আমি সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশর সাথে কাজ করতে গিয়ে নিজে দেখেছি রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগ থেকে প্রচারিত প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান খুবই আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য। অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়েছে রেডিও তেহরানভিত্তিক শ্রোতাক্লাবগুলো বিপ্লবের বার্তা সম্প্রচারে খুবই সহায়ক। এ বিষয়ে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ বিভিন্ন ফরমেট ব্যবহার করে যেমন, জনসমাবেশ, সেমিনার, পথসভা, সাক্ষাৎকার, জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, কুইজ, বিভিন্ন মিডিয়া কাভারেজ, সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার।   

একটি গাছ না থাকলে যেমন ফল হয় না। পরবর্তীতে ফল থেকে সুস্বাদ খাবার হয় না। ঠিক তেমনি ইসলামী বিপ্লব না হলে আদর্শিক রেডিও তেহরান প্রতিষ্ঠিত হতো না। এবং রেডিও তেহরান না থাকলে পৃথিবীব্যাপী আদর্শিক শ্রোতা সৃষ্টি হতো না। ইসলামের প্রচার ও প্রসারও এত বেশি হতো না। তাই কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি ইসলামী বিপ্লবী নেতা যারা পৃথিবীতে একটি আদর্শিক কল্যাণময়ী রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন এবং আদর্শিক রেডিও তেহরান প্রতিষ্ঠা করছেন।

লেখক: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা ও প্রধান উপদেষ্টা, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, বাংলাদেশ।
 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ