সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবি
অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে ঢাকাসহ ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা
বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’কে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল (রোববার) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তাঁদের দাবিগুলো হলো- ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
শিক্ষক সমিতির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি চলায় আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারও বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, "আমরা বলতে চাই প্রত্যয় স্কিম বিরাজমান অবস্থায় বৈষম্যমূলক। আমরা যে সুবিধা পেয়ে আসছি সেটা থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা একেবারে পেনশন পাচ্ছেন না তাদের জন্য। কিন্তু আমাদের হঠাৎ করেই এতে যুক্ত করা হয়। এতে অসন্তোষ সৃষ্টি করা হচ্ছে।"
তিনি আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, "আমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়া সত্ত্বেও প্রতীকীভাবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যোগ দেইনি। অর্থ মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সর্বাত্মক আন্দোলন চলবে।"
প্রসঙ্গত, বিরোধিতার মধ্যেই আজ থেকে (১ জুলাই) চালু হচ্ছে নতুন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত সংস্থায় আগামী ১ জুলাই থেকে যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে। এসব সংস্থার নতুন চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার পর প্রচলিত পদ্ধতিতে পেনশন পাবেন না।
গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিনদিন সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে গতকাল ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। #
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১