জুলাই ০৬, ২০২২ ১৬:০২ Asia/Dhaka
  • রেডিও তেহরান এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

বর্তমান বিশ্বে ইরান একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। ১,৬৪৮,১৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে ৮৩ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর বাস (বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী)। এশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম এই রাষ্ট্রের রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, শিল্প ও সাহিত্য।

ইরানের পূর্বের নাম ছিল পারস্য। বাংলাদেশের সাথে ইরানের রয়েছে সুপ্রাচীন বন্ধন। আমাদের পূর্ব -পুরুষদের মধ্যে ইরানের প্রতি একটি সহজাত অনুরাগ লক্ষ্য করা গেছে। আমার মা উর্দু পড়তে পারতেন; পাশাপাশি ফার্সিও রপ্ত করেছিলেন।

মায়ের সেই ধারাবাহিকতায় কিনা জানি না, রেডিও তেহরানের সাথে আত্মিক একটি সম্পর্ক অনুভব করছি ১৯৯৮ সাল থেকে। তখন আমি রাজধানী শহর ঢাকা থেকে দূরে, প্রত্যন্ত একটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

সকালে অফিসে বেরুনোর আগে প্রায়ই রেডিও টিউন করতাম। একদিন নব ঘোরাতে ঘোরাতে রেডিও তেহরান-কে ‘আবিষ্কার’ করি। ক্যাপসিয়ান সী আর আলবোর্স পবর্তমালা পেরিয়ে ইথারে ভেসে আসছে জীবনধর্মী অনুষ্ঠান। এরপর ব্যস্ততা না থাকলে প্রায়ই রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠান শুনতাম।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র ইরানের প্রতি আগ্রহের আরো কয়েকটি অনুষঙ্গ রয়েছে। যেমন: প্রতি বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় ইরানি স্টল থেকে জিরা, তৈজষপত্র, কার্পেট ইত্যাদি কিনে থাকি। তাছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ইরানি ছবিগুলো বেশ জীবনঘনিষ্ঠ ছিল, আমাদের দেশের ধর্ম, প্রাত্যহিকতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঢাকায় ধানমন্ডিতে ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেও একাধিকবার গিয়েছি...

ইতোমধ্যে ইরান ভ্রমণের একটি সুযোগ আসে। আমি তখন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। চারদিনের একটি ওয়ার্কশপ। বিষয়: Technology Management and Commercialization of Inventions and Research Results. এপ্রিল ২২ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। ২০০২ সালের কথা।

তেহরানের আজাদি গ্রান্ড হোটেলে আমরা দু’বাংলাদেশি উঠেছি। সঙ্গে একই মন্ত্রণালয়ের আবদুল্লাহ খান।

হোটেলের ৮১৮ নম্বর রুমে আমাদের অবস্থান। জানালার পর্দা সরালে  Alborz পর্বতের এখানে ওখানে জমে থাকা বরফ দেখা যায়। রাতে দৃশ্যপট আরো মনোমুগ্ধকর।

অথচ নবম শতাব্দীতে তেহরান ছিল একটি গ্রাম। আর এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শহর, যা ২৫-টিরও বেশি মিউনিসিপাল জেলায় বিভক্ত। তেহরানের সড়কদ্বীপে এখানে ওখানে মনোহরী গোলাপের বাহার যে কারো মন কাড়বে।

ওয়ার্কশপে, অন্যান্য অফিস ভিজিটে এবং ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সহপাঠী-বন্ধু জাহিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অনুধাবন করতে পারলাম যে, ইরান জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগণ্য। তাছাড়া অভ্যন্তরীন রাজনীতিতেও রয়েছে স্বচ্ছতা, ধারাবাহিকতা।

কিন্তু পাশ্চাত্য প্রচার মাধ্যমে ইরান সম্পর্কে প্রতিনিয়ত বিরূপ ধারণা দেওয়া হচ্ছে-নারীর পরাধীনতা, গণতন্ত্রহীনতা, পারমানবিক শক্তির অপব্যবহার এসব নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ তেহরানের রাজপথে চোখে পড়েছে নারীরা মোটরকার চালাচ্ছেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়; Iranian Research Organization for Science and Technology (IROST)-এ পরমাণু বিজ্ঞানের সফল ব্যবহার; নির্ধারিত সময় পর পর জাতীয় নির্বাচন ইত্যাদি ইরানি জনগণের শৃঙ্খলাবোধ, দেশাত্ববোধ এবং অগ্রগতিরই পরিচায়ক।

ইরান ভ্রমণটি স্বল্প সময়ের হলেও দেশটির রাজনীতি, সামগ্রিক অর্থনীতি, উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পর্কে একটি ধারণা লাভের সুযোগ হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রেডিও তেহরানের বেশ ক’টি অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে ইরানের প্রতি শ্রোতাদের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। প্রচার মাধ্যমটি দ্রুততার সাথে সর্বশেষ সংবাদ প্রচার করে থাকে, যা যে কোন প্রচার মাধ্যমের ইতিবাচক দিক। তাছাড়া জীবনগঠনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, শিশুদের জন্য ‘রংধনু’, ইরানি গল্প ও রূপকথা, মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতি, আদর্শ জীবন-যাপন নিঃসন্দেহে শ্রোতাদের মাঝে আগ্রহ উদ্দীপনা ধরে রাখবে; বর্তমান ‘অশান্ত পৃথিবীতে’ সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

পাশ্চাত্য দেশগুলো ইরান সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে প্রতিনিয়ত একটি বিরূপ ধারণা তৈরি করে যাচ্ছে, একটি ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছে। এই বিভ্রান্তি, ধোঁয়াশা দূরীকরণে রেডিও তেহরান দীর্ঘদিন যাবত অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস করি, কুয়াশা কেটে গিয়ে একদিন ‘সত্যের সূর্যালোকে’ মানুষ আলোকিত হবে।

 

মো. ওসমান গণি

অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব

৯৪০/১৪/১, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি

রোড- ১৪, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ