সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩ ১১:১৪ Asia/Dhaka
  • 'আশুরার শোকের শক্তি প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর হৃদয়ে চির জাগরুক হোক'

আসসালামু আলাইকুম। রেডিও তেহরান বাংলা পরিবারের সকলের প্রতি রইলো একরাশ শুভেচ্ছা। হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলাম বার্ষিকী উপলক্ষে রেডিও তেহরান থেকে গতকাল একটি মূল্যবান আলোচনা শুনলাম।

নাসির মাহমুদ ও রেজওয়ান হোসেন-এর অনবদ্য পরিবেশনায় এবং অনন্য সাধারণ করুণ শোকের সুরমূর্ছনায় গোটা অনুষ্ঠানে হারিয়ে গেলাম এক অসামান্য আত্মত্যাগের আবহে। অনুষ্ঠানের প্রতিটি পদে পদে যন্ত্র সংগীতের করুণ সুরের মূর্ছনা এক অনন্য শোকের আবহ সৃষ্টি করেছে।

ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে মহররমের ১০ তারিখ বা আশুরার দিনে মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন ইমাম হোসেইন (আ.)। ছয় মাসের শিশু হজরত আলী আসগর (আ.)-সহ ইমামের ৭২ জন সঙ্গীও এদিন শহীদ হয়েছিলেন। ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হওয়ার ৪০ দিন পূর্তিতে শোক অনুষ্ঠান হয়। সে শোক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে যোগ দিয়েছেন আরবাইন অনুষ্ঠানে। 

আমরা জানি, মানবজাতির ইতিহাসে ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদাতের মত শোকাবহ কোন শাহাদাত নেই। তাই এ শাহাদাতের ঘটনা সময়ের সীমাকে পেরিয়ে অমরত্বের বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে। স্বয়ং ইমাম হাসান (আ.) ইমাম হুসাইনকে (আ.) বলেছেন, "হে হুসাইন, তোমার শাহাদাতের দিনের মতো কোনো শোকাবহ দিন নেই।"

পবিত্র কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আ) পবিত্র মাজার জিয়ারতে যোগ দিয়েছেন কয়েক কোটি মুসলমান

এ কারণেই ইমাম হুসাইনের রক্ত-রঞ্জিত শাহাদতের চৌম্বকীয় আকর্ষণে তাঁর পবিত্র রক্তের শোকে মানবজাতির মহাসাগর পরিমাণ শোকের অশ্রু কিয়ামত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইসলামকে চির-উন্নত রাখার প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।

ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদাতের চেহলাম পালনের উদ্দেশ্য হলো, এ মহান ইমামের সেই অমর ত্যাগ ও বিপ্লবের শিক্ষাকে চির-জাগরূক রাখা। আর ইমাম হুসাইনের বিপ্লবের মধ্যে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ ও সত্যপন্থী নেতাদের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন লুকিয়ে রয়েছে। আমরা ইমাম হুসাইনকে যত বেশি স্মরণ করব তত বেশি ইসলামকে জানতে ও চিনতে পারব; ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে পারব। এ কারণেই আমরা দেখি, পবিত্র কুরআনে বার বার বিভিন্ন নবীর জীবনী ও তাদের কর্ম সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার জন্য রাসূল (সা.) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ.) এমন এক বিশাল ব্যক্তিত্বে যার নাম দিনকে দিন বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে। যার নুর ও বহুমুখী আকর্ষণ ছড়িয়ে পড়েছে। ইমাম হুসাইন (আ) সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, "হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে।"

তিনি আরও বলেছেন, "হুসাইন আমার সন্তান, আমার বংশ ও মানবজাতির মধ্যে তাঁর ভাই হাসানের পর সে-ই শ্রেষ্ঠ। সে মুসলমানদের ইমাম, মুমিনদের অভিভাবক, জগতগুলোর রবের প্রতিনিধি বা খলিফা, ... সে আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ পুরো সৃষ্টির ওপর, সে বেহেশতি যুবকদের সর্দার, উম্মতের মুক্তির দরজা। তাঁর আদেশ হল আমার আদেশ। তাঁর আনুগত্য মানে আমারই আনুগত্য করা। যে-ই তাঁকে অনুসরণ করে সে আমার সাথে যুক্ত হয় এবং যে তাঁর অবাধ্য হয় সে আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।"

মহানবী (সা) আরও বলেছেন, "নিশ্চয়ই হুসাইন বিন আলীর মূল্য আকাশগুলো ও জমিনগুলোর চেয়ে বেশি এবং নিশ্চয়ই তাঁর বিষয়ে আল্লাহর আরশের ডান দিকে লেখা আছে : হেদায়াতের আলো, নাজাতের নৌকা, .... মর্যাদা ও গৌরবের উৎস, এক সুউচ্চ বাতিঘর এবং মহামূল্যবান সম্পদ।"

ইসলামের শত্রুরা মহানবীর (সা.) পবিত্র আহলে বাইতকে ও তাঁদের পবিত্র নামকে চিরতরে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর উল্টো। কারণ, মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর ধর্মের নুরকে রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন এবং এই আলোকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কাফির-মুশরিকদের কাছে যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন। 

বর্তমান যুগে বিভিন্ন মুসলিম মাজহাবের কোটি কোটি শোকার্ত মানুষ ইমাম হুসাইনের চেহলাম-বার্ষিকী পালন করছেন এবং ইমামের বন্দি কাফেলার পদযাত্রার স্মরণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মাইল পথ হেঁটে কারবালায় যাচ্ছেন।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জন্য ক্রন্দন ও শোক প্রকাশের শিকড় প্রোথিত রয়েছে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের ভেতরে এবং এর অশেষ প্রভাব ও বরকত রয়েছে। তার মধ্যে উৎকৃষ্টতম প্রভাব হল তা আমাদের অন্তরগুলোর মরিচা দূর করে, আমাদের জীবনকে উন্নত করে এবং সত্যের পথে অকুতোভয় ও বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার দুর্নিবার মানসিকতা দান করে। যার ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ্‌র রহমত সকলের ওপরে বর্ষিত হয়। শোকের এ শক্তি কতশত জালিমকে উৎখাত করেছে; কতশত মজলুমের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও ইসলামকে ধ্বংসের কবল থেকে উদ্ধার করেছে। শোকের এ শক্তি প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর হৃদয়ে প্রোথিত হয়ে চির জাগরুক হোক এ কামনা করি।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়উপযোগী বাংলা গান, "বহিছে সাহারায়, শোকেরই লু হওয়াই......" শোনানোই আজকের আলোচনাটিকে পূর্ণতা দান করেছে বলে মনে করি।

ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলাম বার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে জানাই গভীর শোক ও সমবেদনা।

 

ধন্যবাদান্তে,

 

এস এম নাজিম উদ্দিন

বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৭

ট্যাগ