ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন: গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা
(last modified Tue, 17 Oct 2023 12:16:13 GMT )
অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ১৮:১৬ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন: গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা

সাইফুল খান: গভীরভাবে নির্মোহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসরাইল রাষ্ট্রটির বিনিময়ে আরবের কয়েকটি পরিবার আলাদা আলাদা বেশ কিছু রাষ্ট্র পেয়েছে। যেগুলো একসময় একত্রে উসমানি সালাতানাতের অংশ ছিল। সঙ্গত কারণেই তাদেরকে এমন কিছু শর্ত ও চুক্তির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে যেসব ইসরাইলের স্বার্থেই করা। যা প্রকাশ্যে আসেনি, হয়তো আসবেও না কোনদিন। তবে সময়ের পরিক্রমায় ওইসব শাসকদের কেউ কেউ নামকাওয়াস্তে ইসরাইলের বিরোধিতা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন।

ইসরাইল এবং তার পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমাবলয় কোনদিনও মুসলিমদের সাথে ওয়াদা রক্ষা করেনি, করবেও না। ফলে ইসরাইলের গ্রেটার ইসরাইল পরিকল্পনাকে সমর্থন এবং এটা সফল করতে তাদের সব ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। আরব জাহান ঘুমিয়ে আছে। তবে তাদের এজন্য জেগে ওঠা উচিত যে, মর্দে মুজাহিদ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন যদি নিভে যায় তাহলে কয়েক বছরের ভেতরেই 'গ্রেটার ইসরাইল প্রজেক্ট' সফল হয়ে যাবে। ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের পাহাড় ডিঙিয়ে তারা আরব জাহানে সম্প্রসারিত হতে পারছে না। এই বাস্তবতাকে বিশ্বাস করার মত সৎ বিশ্বাস থাকতে হবে।

অপরদিকে ইরান যদি সামরিক দিক দিয়ে এতটা শক্ত অবস্থানে না থাকতো তাহলে এই অঞ্চলে আরবের মুসলিমদের ফিলিস্তিনিদের মত এখন উদ্বাস্তু হয়ে বাঁচতে হতো। ইরানের ভয়ে ইরানকে কাল্পনিক শত্রু বানিয়ে আরব রেজিমগুলোর সাথে ইসরাইল বন্ধুত্ব করেছে। সেই বন্ধুত্ব আরো গভীর থেকে গভীরতম করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে বন্দুকের নল দিয়েই আরব রেজিমগুলোর কাছ থেকে হিস্যা আদায় করতো ইসরাইল। আরব দেশগুলোর সামরিক সহযোগিতা পশ্চিম থেকে আসে ইসরাইলের আনঅফিশিয়াল সবুজ সংকেতে। কতটুকু আর কী কী আসবে।

আরব জাহান মুসলমানদের অভিভাবক সেজে বসে আছে। আর তাদের অভিভাবক ইসরাইল-আমেরিকা গং। পৃথিবীর কোথাও মুসলমানদের উপর নির্যাতন হলে আরব মুরুব্বিদের কোন ভালো ভূমিকার ইতিহাস নেই। কাশ্মিরের রক্তে রঞ্জিত মোদির হাত। সেই মোদিকে সৌদি দিয়েছে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। এ যেন মুসলিম হত্যায় অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত করা।

আরো উদাহরণ হিসেবে ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে আনা যায়। ৯০-এর উপসাগরীয় যুদ্ধে সৌদি আরবের ঘাঁটি ব্যবহার করে আমেরিকা ইরাকে হামলা করেছে। শত শত নবী রাসূলের পবিত্র ভূমি ইরাকে সাদ্দাম ছাড়া কি জনগণ ছিল না?  তাদের হত্যায় সহযোগিতা করার দায় কি আরব জাহান এড়িয়ে যেতে পারবে?

সাদ্দাম হোসেনকে ধরার আগে, যাদের কাছে থেকে সে সম্ভাব্য সহযোগিতা পেতে পারত সেই শিশু ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে সাদ্দামকে দিয়েই দীর্ঘ যুদ্ধের চোরাবালিতে আটকে দেয় আমেরিকা-ইসরাইল। সাদ্দাম সেই যুদ্ধে নিজেকে না জড়ালে এবং ইরান-ইরাক শত্রুতা না থাকলে হয়তো এই করুণ পরিণতির ভেতর দিয়ে তাঁকে যেতে হতো না। গেলেও ইরানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতো। একই পরিস্থিতি লিবিয়ার গাদ্দাফিরও হয়েছে। অথচ তখন হারমাইন শরীফের খাদেমগণ পশ্চিমের পক্ষে ছিলেন। অর্থ, ভূখণ্ড দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে হামলায় সহযোগিতা করেছে। কোটি কোটি জনগণের জীবনকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছে। এইসব দুর্বল শাসক যারা পুরোটাই অপরের উপর নির্ভরশীল তারা কখনোই নৈতিকভাবে সাহসী হতে পারে না। অন্তত ইতিহাসে সেরকমটি দেখা যায় না।

যদি ফিলিস্তিন নামক কোন দেশ আর না থাকে পুরোটাই হয় ইসরাইল তাহলে কি হতে পারে?

গ্রেটার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার প্রধানতম বাধা হচ্ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন। বিশেষ করে গাজা ও লেবাননভিত্তিক মুজাহিদদের প্রতিরোধকে দমন করে দখলদারিত্ব তুলনামূলক ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। ইসরাইলের তরফ থেকে বিবেচনা করলে সিকি শতাব্দী পার হলেও তাদের প্রমিজ (?) ল্যান্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। যেখানে সমগ্র পৃথিবী তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও অমানবিক কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

আরব দেশগুলোতে যদি গণতন্ত্র বা এমন কোন পদ্ধতির সরকার থাকতো যেখানে জনগণের বেছে নেয়ার সুযোগ আছে। তাহলেও জনগণের চাপের মুখে যেকোন দুর্বল সরকারও কিছু একটা করতে বাধ্য থাকে।  তাবৎ দুনিয়ার সব অমুসলিম দেশগুলোতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ হলেও আরবদেশে সেই সুযোগ নেই। কী আশ্চর্য এক পদ্ধতি!  মজার ব্যাপার হলো- পশ্চিম কিন্তু তাদের গ্লোবাল অর্ডারের ধনুকের তূন ওই গণতন্ত্র এখানে ব্যবহারে ঝুঁকি অনুভব করে।

হামাস, ইসলামি জিহাদ, হিজবুল্লাহর যুগপৎ আন্দোলনের ফলাফল কি হতে পারে এটা কেউ জানে না। বিশেষ করে হামাসের ভবিষ্য কি? তবে অনুমান করা যায় হামাসের এই প্রতিরোধ একটি নির্দিষ্ট গতিপথ সৃষ্টি করবে। হয় এই শহীদি কাফেলার প্রতিরোধ চিরতরে থেমে যাবে নাহলে আরো বেগবান হবে। যদি থেমে যায়, ইসরাইল তখন তার গ্রেটার ইসরাইল চর্চার অখণ্ড অবসর পাবে। আরব দেশগুলোর একটার পর একটা ঘাড় মটকাতে আর অসুবিধা হবে না। ইসরাইল তখন বিশ্বাস করবে অন্তত পবিত্র হারমাইন শরীফকে এড়িয়ে গেলে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ইরানি জনগণ আরবদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করবে না।

প্রশ্ন উঠতে পারে প্রথম ক্বিবলার কি হবে? এর পাল্টা প্রশ্নও উঠতে পারে। প্রথম ক্বিবলার পবিত্রতা ও নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে দশকের পর দশক ধরে ইরানের প্রচেষ্টাকে শত্রুতার ম্যাগনিফাইং গ্লাসে দেখা আরব দেশসমূহের তবে দায়িত্ব কী? শুধুই কি মিসকিনদের কফিল আর উম্মাহর মুরব্বি সেজে বসে থাকা?

ফিলিস্তিনে বর্তমান জমানার সেনাবাহিনী দিয়ে সফল হওয়া সম্ভব না। আরব-ইসরাইল ৬ দিনের যুদ্ধ সেটা প্রমাণ করেছে। জোটের ভিতর এত এত ইহুদি এজেন্ট, বেঈমান আর মোনাফিকের মিছিল নিয়ে সফল হওয়া সম্ভব না। সেখানে সফল হতে এই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। ফলাফল তাদের মাধ্যমেই মুসলমানেরা পাবে ইনশাআল্লাহ। এরা এবং এদের সাথে জড়িত সকল পৃষ্ঠপোষকেরাই আল্লাহ মনোনীত সত্যের পতাকাবাহী দল বলেই বিশ্বাস হচ্ছে। অন্তত লক্ষণ তাই বলে।

বিগত ৭৫ বছর ধরে অত্যাচার আর নির্যাতনের পাশাপাশি ৫০ বছর ধরে চলা আলোচনার নাটক কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি, পারবেও না। সম্পূর্ণ ইস্যুটাই হচ্ছে ধর্মীয়। তাই বদরের শপথ নিয়েই এই অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। এখানে হারাবার কিছু নেই। এই কাফেলা শহীদি তামান্নায় সিক্ত হয়ে হবে জান্নাতের সবুজ পাখি না হয় মর্দে মুজাহিদিন গাজী হয়ে বেঁচে থাকবে। ঈমানি শক্তিতে বলীয়ানদের সামনে দুনিয়ার শক্তির হিসেব নিকেশ তুচ্ছ। আমার এমন এক সময়ের সাক্ষী, যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আমাদের ভূমিকা নিয়ে বিবেককে প্রশ্ন করার এখনই সময়। বিজয় আসমানি সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের ভূমিকা কী। একজন অধার্মিকেরও এখানে ভূমিকা আছে। মানবতার পক্ষে বিবেক তাঁকে থাকতে বলবে। মুসলমানদের এখানে আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন। তাবৎ দুনিয়ার মুসলিমদের দায়িত্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আওয়াজ বুলন্দ করা। ফিলিস্তিনের জনগণ সেই সে জাতি; যারা জানেন কিভাবে কুফরের বিরুদ্ধে লড়তে হয়। আমাদের অনেক কাজ। তাদের সাহস যোগানো, সর্বাত্মক সহযোগিতা, আল্লাহর কাছে অনবরত দোয়া করা, নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিরোধ করা।#

লেখক: প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৭

 

ট্যাগ