ইরানি, হিন্দু, মুসলমান ও ইউরোপীয়দের নামে
ইসরাইলি ট্রলরা এভাবেই ঘৃণামূলক যুদ্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে
পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরাইল গত কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার ট্রলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা ভুয়া নামে ঘৃণামূলক যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
পার্সটুডে’র মতে, ট্রল হলো ইন্টারনেটে ব্যবহৃত এমন একটি পরিভাষা যা দিয়ে তাদেরকে বোঝানো হয় যারা অনলাইন স্পেসে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কিছু প্রোগ্রামযুক্ত বার্তা পাঠায় যাতে অন্যরা আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয় এবং দর্শকদের মনকে প্রভাবিত করে।
নীচের ছবিটি ২০১৬ সালে অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তাতে ইসরাইলি ট্রল ফার্মের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। ‘ট্রল ফার্ম’ শব্দটি সাধারণত এমন একটি গোষ্ঠীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে কাজ করে এবং প্রধানত ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল গর্বের সঙ্গে একটি প্রকল্প শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে যেখানে বিশ্ববাসী এবং বিশেষ করে সাইবার স্পেসের জনমতের মধ্যে ইসরাইলকে নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ হিসেবে তুলে ধরার জন্য ১৩,০০০ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এই গ্রুপটির দায়িত্ব হিসেবে ‘হাসবারা’ (হিব্রু ভাষায়: הַסְבָּרָה) শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘ব্যাখ্যা করা’। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করার জন্য ‘হাসবারা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় বলে এটি ‘প্রতিক্রিয়াশীল ও ঘটনাকেন্দ্রীক’ পরিভাষা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এই প্রকল্পটি একটি যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে, সাধারণত ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞকে ন্যায়সঙ্গত কাজ হিসেবে তুলে ধরে।
সেই ২০১৬ সালেই সাইবার স্পেসে এই সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছিল যে, যেসব ট্রল আপনাদের সামনে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপন করে তাদের ৯০%ই ইহুদিবাদী ইসরাইলের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষিত পেশাদার লোক।
ইসরাইলিরা একইসঙ্গে বিশ্বের কিছু সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক তৎপরতা পরিচালনাকারী গোষ্ঠীকে মনস্তাত্ত্বিক অভিযান পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এ ধরনের একটি গোষ্ঠীর নাম পিপলস মুজাহেদিন যেটি ইসরাইলিদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আলবেনিয়ায় একই ধরনের ট্রল ফার্ম খুলেছে। ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থা বিরোধী এই গোষ্ঠীটি সামরিক উপায়ে ব্যর্থ হয়ে এখন ‘কিবোর্ড আর্মিতে’ রূপ নিয়েছে। পিপলস মুজাহেদিনের সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিজেদের অপরাধযজ্ঞ ও বিশ্বাসঘাতকতার স্মৃতিচিহ্ন মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা।
সাইবার স্পেসে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের অন্যতম সহায়ক প্রতিষ্ঠানের নাম সাইবার ইউনিট-৮২০০। ইসরাইলি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা- আমান-এর অধীন এই সংস্থার দায়িত্ব গুপ্তচরবৃত্তি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা, হ্যাক করা, আড়ি পাতা, ডিকোডিং ও ডিজিটাল কোডিং করা। সাইবার ইউনিট-৮২০০’র বেশিরভাগ কর্মী ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করছে যাদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
সাইবার ইউনিট-৮২০০তে যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা ফার্সিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা রপ্ত করেছে। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাইবার জগতকে বিষিয়ে তোলার কাজে কর্মী তৈরি করার লক্ষ্যে প্রাইমারি স্কুল পর্যায় থেকেই ইসরাইলি শিশুদেরকে ফার্সি ভাষা শেখানো শুরু করে।
সাইবার ইউনিট-৮২০০’র সদস্যরা অনলাইন ইউজারের ছদ্মবেশে ইরানসহ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো, কমেন্ট করা, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারণার ঝড় তোলা, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবকে দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাত বাধানোর কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা ইহুদিবাদী চিন্তাধারার প্রচার ও প্রসার ঘটানো, মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার ও বিভেদ ছড়ানো, মুসলমানদের সংস্কৃতি ও চিন্তাধারাকে বিষিয়ে তোলা এবং তাদের নৈতিক, মানবিক ও আদর্শিক মূল্যবোধকেও আক্রমণ করার চেষ্টা করে।
এদের একটি কৌশল হলো একটি চিন্তাধারা পক্ষ নিয়ে আরেকটি চিন্তাধারাকে আক্রমণ করা। উদাহরণস্বরূপ, তাদের কেউ কেউ নিজেকে মুসলমান দাবি করে হিন্দুদের আক্রমণ করে ট্রল শুরু করে। আবার কেউ কেউ নিজেকে হিন্দু দাবি করে মুসলমানদের হুমকি দিতে থাকে। এভাবে তারা হিন্দু ও মুসলমানদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।#
পার্সটুডে/এমএমআই/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।