মার্চ ৩০, ২০২৪ ২০:০৬ Asia/Dhaka
  • কেন ইসরাইল গাজার হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে?

বেশ ক'দিন ধরে গাজার আশশিফা হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রেখেছে হানাদার ইসরাইলি সেনারা। যে রাতে ইসরাইলের প্রতিনিধিদল দোহায় গিয়েছিল যুদ্ধ-বিরতির আলোচনায় যোগ দিতে সেই রাতেই আশশিফা হাসপাতালে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল ইসরাইলি সেনারা যাতে এই হামলাকে ওই আলোচনায় ছাড় অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

উত্তর-গাজায় অবস্থিত এই হাসপাতালে এখনও ইসরাইলি সেনাদের অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। এই সেনারা হাসাপাতালের কর্মী, রোগী ও অবরুদ্ধ শরণার্থীদের হুমকি দিচ্ছে এই বলে যে গোটা হাসপাতালটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হবে এবং এই আশ্রয়-স্থলটি তারা ত্যাগ না করলে তাদেরকে এর ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে নিহত হতে হবে!

অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাদের ওই হুমকি এখন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতাল থেকেই ছবিসহ নানা খবর আসছে যে, রোগিরা শহীদ হচ্ছেন, চিকিৎসা-কর্মীরা সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার, হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে এবং হাসপাতালের কোনো কোনো অংশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে হানাদার সেনারা। ইহুদিবাদী সেনারা হাসপাতালের আশপাশের বাসভবনগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এই হাসপাতালে ফিলিস্তিনি নারী ইসরাইলি সেনাদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলেও খবর এসেছে।

গাজার আশশিফা হাসপাতালের ভেতরে এখনও হাজার হাজার ব্যক্তি রয়েছেন যাদের বেশিরভাগই রোগি ও আহত ফিলিস্তিনি। অবরুদ্ধ এ হাসাপাতালের রোগিদের কাছে ওষুধ পৌঁছেনি বলে এ পর্যন্ত অন্তত চারজন রোগী মারা গেছে এবং অবরোধ অব্যাহত থাকায় আরও অনেকের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।

ইসরাইল এর আগেও আশশিফা হাসপাতালে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল এই অজুহাত দেখিয়ে যে হামাসের কমান্ডাররা এই হাসপাতালকে ব্যবহার করেছেন সামরিক অভিযান চালানোর কাজে। ইসরাইল এই হাসপাতালে অনেক প্রতিরোধ যোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে বলে খবরও দিয়েছিল। কিন্তু পরে ওই দাবি সঠিক নয় বলে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।ইসরাইল আশশিফা হাসপাতালে গ্রেফতার হওয়া ফিলিস্তিনিদের যেসব ছবি প্রকাশ করেছে তা ভুল বলেও স্বীকার করেছে। কিন্তু ইসরাইল এখনও এ দাবি অব্যাহত রেখেছে যে এই হাসপাতালটিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আসলে এই হাসপাতালটির ওপর অবরোধ অব্যাহত রাখা এবং রোগী ও শরণার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই ইসরাইল এসব দাবি করছে। ইসরাইল এর আগেও গাজার হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তুলেছিল এবং বিশেষ করে আশশিফা হাসপাতালের নীচে হামাসের গোপন নানা সুড়ঙ্গ বা টানেল ও হামাসের কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড সেন্টার থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করে হাসপাতালটির  চারদিক ঘেরাও করে সেখানে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ইসরাইল ওইসব দাবির কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আর এ থেকেই বোঝা যায় গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে, স্কুল, বাজার এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ইসরাইলি হামলা আসলে যুদ্ধের পরিকল্পিত অপ-কৌশল মাত্র যাতে গাজার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-অবকাঠামোগুলোসহ বসবাসের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়া যায়। গত ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজার  হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা-কর্মী, রোগী ও বিছানায় শয্যাশায়ী শিশুদের হত্যা করার নানা ঘটনা ইসরাইলের এই পৈশাচিক ও অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই স্বাক্ষ্য বহন করছে স্পষ্টভাবে।

হাসপাতালগুলোতে ও নানা আশ্রয়-কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ইসরাইল আলোচনার টেবিল থেকে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে বলেও বিশ্লেষকরাও উল্লেখ করছেন। ইসরাইল হামাসকে গাজা থেকে নির্মূল করার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি ইসরাইলি সেনারা।ফিলিস্তিনিরা যাতে গাজা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং সেখানে আর ফিরে আসতে না পারে সে লক্ষ্যেই ইসরাইল পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করছে। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি নির্মূল করতে বা এ অঞ্চল থেকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে তাড়িয়ে দিতে চায় ইসরাইল যাতে এই অংশকে ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই উত্তর-গাজার যারা আশশিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে ও তাদের অনেককে হত্যা করে ইসরাইল তাদেরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে।চিকিৎসকরা উত্তর গাজার আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা করতে গিয়ে তাদের গায়ে এমনসব ক্ষত দেখেছেন যা তারা আর কখনও দেখেননি।

হাসপাতালগুলোতে ওষুধ পৌঁছাতে না দেয়া মানবতার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অপরাধ। আসলে ইহুদিবাদী ইসরাইল পুরো গাজাকেই ফিলিস্তিনি-শূন্য করে সেখানে স্থায়ী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলেও অনেক বিশ্লেষক উল্লেখ করছেন।

অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকারের রূপরেখা গড়ে তোলা হয় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী ষড়যন্ত্রের আওতায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে মুহাজির হিসেবে পাঠিয়ে। ১৯৪৮ সালে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। আর সেই সময় থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা গণহত্যার নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে যাতে গোটা ফিলিস্তিনকে দখল করতে পারে ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইহুদিবাদী ইসরাইল নানা অজুহাতে গাজা উপত্যকাকেও স্থায়ীভাবে দখল করার বা নিয়ন্ত্রণে রাখার ষড়যন্ত্র করছিল বলে নানা খবর এসেছে। গাজা-সংলগ্ন সাগরে ও সাগর-উপকূলে গ্যাস ও তেলের খনি রয়েছে এবং এসব খনিতে গ্যাস ও তেলের ব্যাপক মজুদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।  

 

ট্যাগ