এপ্রিল ০১, ২০২৪ ১৬:১৮ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিন দখল ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ

অভিবাসী ইহুদিদের মাধ্যমে ফিলিস্তিন দখল করার ঘটনা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক কৌশলের মতোই এবং এই দখলদারিত্ব ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার একটি উদাহরণ।

ইউরোপীয়রা যেখানেই গেছে, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, আফ্রিকায়, এই মনোভাবই দেখিয়েছে। তাদের ভূমি দখল করো, যতটা বেশি সম্ভব জমি দখলে নাও, যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তাদের ধ্বংস করে দাও।

আলজেরিয়ার ঔপনিবেশিক আমলে ফরাসি দখলদার বাহিনী

ইসরাইল "হামাসকে ধ্বংস করার" দাবি তুলে কয়েক মাস ধরে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। তারা তো একটা আদর্শকে পরাজিত করতে পারে না, যদি তোমাদের ভূমি দখল করা হয়, প্রতিরোধ করার অধিকার তোমার আছে। দখলদারিত্ব চলতে থাকলে এই ধারণাটিও চলতে থাকবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা প্রভাব ফেলবে।

গাজায় যেসব ফিলিস্তিনী বসবাস করছে তাদেরকে মিশরে চলে যেতে বাধ্য করতে চায় ইসরাইল। ইসরাইলের উদ্দেশ্য একদম স্পষ্ট। ইসরাইল চায় একটি বিশেষ ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যেখানে ফিলিস্তিনী কিংবা কোনো আরবের অস্তিত্ব না থাকে। আরও চায় গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে।

ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত দখলদার ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী এবং ফিলিস্তিন উপনিবেশ

তারা এখন উত্তরে যা করার চেষ্টা করছে তা হল একটি বাফার জোন তৈরি করা, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ববিহীন একটি এলাকা, তারা ফিলিস্তিনিদের জাবালিয়া এবং বেইত হানুনের মতো এলাকাগুলোকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করতে চায়। তাদের ধারনা এটা করতে পারলে ফিলিস্তিনীরা আর ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।

১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণায় যখন ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তখন ফিলিস্তিনের ইহুদি জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৫৬ হাজার। ১৯২২ সালে যখন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তনের  দরজা পুরোপুরি খুলে দেয়া হয় এবং ১৯৩৯-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলো থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের বিভাজন পরিকল্পনা পর্যন্ত ইহুদিবাদীদের অভিবাসন তীব্র গতিতে চলতে থাকে।

তাদের সংখ্যা তখন ৬ লাখ ৬৫ হাজারে পৌঁছেছিল। এর কারণ ছিল তৎকালীন ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ উপনিবেশিকতা। এর মানে ব্রিটেন ছিল প্রধান নির্বাহী, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো শাসক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সে দেশের একজন মালিক। ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব কখনই ব্রিটেনের কাছে হস্তান্তর করা হয় নি।

ব্রিটেনের সহায়তায় ফিলিস্তিনের ইহুদি জনসংখ্যা যখন বাড়ছিল তখন ফিলিস্তিনি আরবদেরকে তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে যখন রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইল তার স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল তখন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি। (এদেরকে সন্ত্রাসী কায়দায় জোর করে ঘর-বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে শরণার্থীতে পরিণত করেছিল ইসরাইলি সন্ত্রাসীরা।)

[এটা অত্যন্ত দুঃজনক ঐতিহাসিক সত্য যে বিভিন্ন মহাদেশের নানা অঞ্চলের আদিবাসীদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা। কানাডায় কিছু দিন আগেও পাওয়া গেছে আফ্রিকান শিশু শিক্ষার্থীদের বহু গণ-কবর। আমেরিকা মহাদেশে রেড-ইন্ডিয়ানরাও হয়েছে ব্যাপক গণহত্যার শিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজে করে আনা হত আফ্রিকানদের এবং তাদের দাস বানিয়ে রাখা হত ও দাস হতে না চাইলে বা পালিয়ে যেতে চাইলে তাদের ওপর চালানো হত নানা নির্যাতন ও এমনকি হত্যাযজ্ঞ।

আলজেরিয়া, লিবিয়া ও মিশরসহ আফ্রিকার বহু দেশে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা গণহত্যা চালিয়ে হত্যা করেছে অগণিত বা কোটি কোটি মানুষ। ভারতবর্ষেও ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে হত্যা করেছে কোটি কোটি মানুষ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা বৃহত্তর বাংলা ও ভারতের নানা অঞ্চলে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিক থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ বাঁধিয়ে ও ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রায় দশ কোটি মানুষকে হত্যা করেছে বলে প্রামাণ্য নানা তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। উপনিবেশবাদী ব্রিটিশরা প্রায় ১০০ বছর আগে ইরানেও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ বাঁধিয়ে হত্যা করেছিল প্রায় এক কোটি ইরানি। দ্র. ‘বৃহত্তর বাংলায় ব্রিটিশ শাসকদের গণহত্যা বা বৃহ্ত্তর হলোকাস্ট’ শীর্ষক প্রবন্ধ।

তাই ইউরোপীয় ইহুদিবাদীদের কাছ থেকে একই ধরনের নৃশংসতা ছাড়া অন্য কোনো চরিত্র আশা করা যায় না বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।]

[আনাতোলিয়া সংবাদ সংস্থার সাথে মিডল ইস্ট মনিটরের পরিচালকের সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত]

পার্সটুডে/এনএম/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ