নব্য-উপনিবেশবাদ বনাম ইসলামের দ্বন্দ্বের নেপথ্য
কেন ইসলাম ধর্মকে সহিংসতার ধর্ম হিসেবে দেখানো হচ্ছে?
ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম নয় ও মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির সঙ্গে এ ধর্ম খাপ খায় না, ইসলাম সহিংস বা হিংস্র ধর্ম-এসবই হচ্ছে এমন কিছু আরোপিত লেবেল বা অপবাদ যা অন্যায্য ও কাপুরুষোচিত। ইসলামের শত্রুরা এসব অপবাদ প্রচার করছে। কিন্তু কেন?
কেন দয়া ও ভালোবাসার ধর্ম ইসলামকে সহিংসতা ও তরবারির ধর্ম বলে প্রচার করা হচ্ছে? অথচ ইসলাম ধর্ম হচ্ছে এমন এক ধর্ম যার পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের প্রতিটি অধ্যায় বা সুরা শুরু হয় পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নাম নিয়ে। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর রয়েছে চারটি দিক বা পয়েন্টের মধ্যে:
-প্রথমত: রাজনৈতিক ও উপনিবেশবাদী অশুভ ইচ্ছা
দুঃখজনকভাবে এ বিষয়ে যেসব অপবাদ ও অন্যায্য কথা বলা হয় এবং জনমতের কাছে যেসব দাবি প্রচার করা হয় সেসবের বেশিরভাগেরই উৎস হল শত্রুতা ও রাজনৈতিক অশুভ ইচ্ছা। ইসলাম অন্যান্য ধর্মগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার আদর্শ। আর এই আদর্শের ভিত্তি হল একত্ববাদ, জনগণ, খোদা-ভীতি ও ন্যায়বিচার। ইসলাম সমাজে এইসব প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় সক্রিয় বলে রাজনৈতিক মাফিয়া চক্রগুলো নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ও নানা ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি করে জাতিগুলোকে ইসলাম-আতঙ্কের ফাঁদে ফেলতে চায়। ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার নানা অপকৌশলের মধ্যে এ ধর্মকে সহিংসতার ধর্ম বলে প্রচার করা অন্যতম। এইসব ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও অপকৌশলের মূল লক্ষ্যটা হল ইসলাম তাদের অশুভ কর্মসূচিগুলোর জন্য যেসব ঝামেলা সৃষ্টি করে সেসবকে ঠেকিয়ে রাখা বা দূর করা।
-দ্বিতীয়ত: কথিত প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ বা পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্টদের ভুল ও সংকীর্ণ উপলব্ধি
কোনো কোনো পশ্চিমা প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ বা কথিত ওরিয়েন্টালিস্ট কোনো কোনো মুসলিম শাসকের আচরণ ও কাজকে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বলে ভুল ধারণা গ্রহণ করেছেন। অথচ তাদের ওইসব ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ও নীতিকে ইসলামের নীতি বলে গ্রহণ করা ঠিক হয়নি। ওইসব শাসক ধর্ম ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে জনগণের শাসক না হয়ে তরবারির জোরে জনগণের ওপর ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। ওরিয়েন্টালিস্টরা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত না হয়ে কোনো কোনো রাজা-বাদশাহ ও কথিত খলিফাদের আচরণের ভিত্তিতে ইসলামের ইতিহাস লিখে তা প্রচার করেছেন। অথচ এইসব শাসক বা খলিফা প্রতারণার মাধ্যমে বা বলদর্পিতার জোরে ক্ষমতাসীন হয়েছেন।
-তৃতীয়ত: ত্রুটিপূর্ণ, ভুয়া বা মিথ্যা ও বানোয়াট ইসলামী ধারাগুলোর জোরালো হওয়া
দায়েশ বা কথিত আইএস বা আলকায়দার মত কিছু গোষ্ঠী যারা হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা ও জুলুমের প্রতীক এবং ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ দূরে –এসব গোষ্ঠী এই ধারার অংশ। এরা বাহ্যিকভাবে একটি ইসলামী লেবাস নিয়ে গড়ে উঠেছে। এরা পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহায়তায় ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের এক বিশাল অঞ্চল দখল করেছিল। (হিলারি ক্লিনটন ও ট্রাম্পসহ) কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে আল-কায়দা ও দায়েশ তাদের ওপর নির্ভরশীল ও তাদেরই গড়ে তোলা। পশ্চিমা সরকারগুলো ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে এইসব গোষ্ঠীর কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করেছিল।অবশ্য বিশ্বের মুসলমানরা মুসলমানের বেশ-ধরা এইসব গোষ্ঠীর প্রতি ব্যাপক ঘৃণা পোষণ করেন এবং তাদের তৎপরতাকে ইসলামী পরিচিতির সঙ্গে সম্পর্কহীন ও উপনিবেশবাদী পরিচিতির প্রকাশ বলেই মনে করেন। তারা যে মুসলমানের পরিচয় বহন করে না তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল পবিত্র কুরআনের এই বাণী যেখানে বলা হয়েছে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যার সমান। পবিত্র কুরআনের পঞ্চম সুরা তথা সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াত: কোনো মানুষ হত্যা বা অশান্তি সৃষ্টির মত অপরাধ না করা সত্ত্বেও যদি তাকে হত্যা করা হয় তাহলে যেন সব মানুষ তথা মানবজাতিকে যেন হত্যা করা হল।
-চতুর্থ তথা সর্বশেষ দিকটি হল: জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ বলে উল্লেখ করা
ধর্মের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত: প্রত্যেক জীবিত সত্ত্বা নিজেকে টিকিয়ে রাখতে নিজের ধ্বংসকারী চলক বা উপাদানগুলোর সঙ্গে সংগ্রাম করে এবং সেইসব বাধার মোকাবেলা করে যায় যাতে সে কাঙ্ক্ষিত পূর্ণতাগুলোর অধিকারী হতে পারে। তাই মুসলমানরাও আত্মরক্ষাকে নিজের বৈধ অধিকার বলে মনে করে এবং শত্রুর মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ায় ও প্রতিরোধের পথ বেছে নেয়। সবার কাছেই এটা স্পষ্ট যে এ ধরনের প্রতিরক্ষা মানবীয় প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। উপনিবেশবাদীরা মুসলমানদের ওপর হামলা চালালে মুসলমানদের কি জবাব দেয়া তথা পাল্টা হামলা চালানো কি উচিত নয়? জিহাদ হল সেই জবাব বা পাল্টা হামলা উপনিবেশবাদীদের প্রতি, এটা অন্যের ওপর আগ্রাসন নয়। যদি মহানবী (সা)'র যুদ্ধগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে এইসব যুদ্ধ ছিল প্রতিরক্ষামূলক এবং শান্তি ও দয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
অবিকৃত আসমানি ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের আলোকিত বাণীগুলোর দিকে সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিলে এবং ইসলামের পবিত্র ও নিষ্পাপ ইমামদের বাণীর দিকে দৃষ্টি দিলে এই বাস্তবতা ভালোভাবে বোঝা যাবে। এই মহান নেতৃবৃন্দের সামাজিক ও দৈনন্দিন তৎপরতার সঙ্গে পশ্চিমা সভ্যতার দাবিদারদের আচরণের তুলনা করা হলে এইসব বাস্তবতা সূর্যের আলোর মতই দেদীপ্যমান ও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।