মহানবীর (সা) সাহাবিদের মধ্যে হযরত যাবেরই প্রথম ইমাম হুসাইন (আ.)’র কবর জিয়ারত করেন
(last modified Tue, 30 Oct 2018 21:17:13 GMT )
অক্টোবর ৩১, ২০১৮ ০৩:১৭ Asia/Dhaka
  • কারবালায় শোকার্ত মানুষের ঢল
    কারবালায় শোকার্ত মানুষের ঢল

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র দোহিত্র ইমাম হুসাইন (আ) ইসলামের জন্য আজ থেকে  প্রায় ১৩৭৯  বছর আগে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়েছিলেন।

তিনিই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মহাপুরুষ যার স্মরণে চালু হয় চেহলাম প্রথা। মহানবীর (সা) সাহাবিদের মধ্য থেকে ইমামের কবর প্রথম জিয়ারত করেন বিখ্যাত সাহাবি হযরত যাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারি (রা)। এ জন্য তিনি মদিনা থেকে কারবালায় আসেন  ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলামের দিনে তথা তাঁর শাহাদাতের পর ৪০তম দিনে।  

বয়সের দিক দিয়ে অতি বৃদ্ধ এবং দৃষ্টি-শক্তিহীন হযরত যাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারিকে এই সফরে  সঙ্গ দেন আতিয়ে কুফি নামক এক ব্যক্তি। সে দিনটি ছিল ইমামের শাহাদাতের প্রথম চল্লিশা বা চেহলাম। একই সময়ে মহানবীর (সা) বন্দি পরিবারও তার কবর জিয়ারত করেন। তাঁরা গণ-বিদ্রোহের আশঙ্কার মুখে ইয়াজিদের নির্দেশে সিরিয়ার আটককেন্দ্র থেকে ছাড়া পেয়ে কারবালা হয়ে মদিনায় ফিরে যান ইমাম জাইনুল আবেদিনের নেতৃত্বে। কারবালায় এসে হযরত যাবের ও আতিয়ের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। ইমাম জাইনুল আবেদিনের (আ) সঙ্গে যাবেরের কথা-বার্তা বা মত-বিনিময় হয়। 

বর্ণনায় এসেছে, হযরত যাবের কারবালায় পৌঁছে ফুরাতের পানিতে গোসল করলেন এবং লম্বা পোশাক পরে গায়ে সুগন্ধি মাখেন। এরপর প্রতি মহান আল্লাহর জিকির করতে করতে ইমাম হুসাইন (আ)'র পবিত্র কবরের পাশে পৌঁছেন। সেখানে হযরত যাবের তিন বার আল্লাহু আকবর ধ্বনি দেন যার উদ্দেশ্য সম্ভবত মহান আল্লাহ ও কারবালার শহীদদের প্রশংসা করা। তিনি সঙ্গী আতিয়েকে বললেন, আমার হাত হুসাইনের কবরের ওপর রাখ। আতিয়ে তা করার পরই তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েন। আতিয়ে যাবের (রা.)'র মাথায় পানির ছিটা দেয়ার পর তাঁর হুঁশ ফিরে আসে। হুঁশ ফেরার পর তিনি তিন বার দুঃখ-ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন: হুসাইন! হুসাইন! হুসাইন!

এরপর বললেন: বন্ধু হয়েও বন্ধুর ডাকে কেন জবাব দিচ্ছ না? পরে সম্তবতঃ শহীদ ইমামের জবাব না দেয়া প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন: যে হুসাইন নিজের রক্তে রঞ্জিত এবং যার দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তাঁর কাছ থেকে জবাব আশা করছি! (পবিত্র কুরআনের ভাষায় শহীদরা মৃত নন, বরং তাঁরা জীবিত। ইমাম হুসাইনের বিচ্ছিন্ন মাথার কুরআন তিলাওয়াতের ঘটনাও ছিল তার অন্যতম প্রমাণ। এক বর্ণনায় এসেছে কোনো এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইনের কর্তিত মস্তকের অস্থায়ী কবরের উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে জবাব পেতেন। কিন্তু একদিন তিনি তা পাননি। এর পরের বার সালাম দিয়ে আবারও জবাব পাওয়ার পর বিগত দিনে সালামের জবাব না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উত্তর আসে, 'সে সময় আমি মহানবীর রওজাতে নানাজানের সঙ্গে সংলাপে ব্যস্ত ছিলাম!')

পবিত্র কারবালা 

এরপর যাবের ইমাম হুসাইনকে (আ) উদ্দেশ করে বলেন: '' আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি শ্রেষ্ঠ ও মহান মু'মিনদের সন্তান। তুমি হেদায়াত ও খোদাভীতির পথিকৃতের সন্তান। তুমি কাসা ও আবার তথা রাসূল (সা.)'র চাদর এবং আলখাল্লার নীচে স্থান পাওয়া পাঁচ সদস্যের মধ্যে পঞ্চম। তুমি মহান আমিরুল মু'মিনিনের এবং ফাতিমা জাহরা (সা.)'র সন্তান। আর কেনই বা এমনটি হবে না, কারণ, রাসূলগণের সর্দার সাইয়্যেদুল মুরসালিন নিজ হাতে তোমাকে খাবার খাইয়েছেন এবং তুমি পরহিজগারদের কোলে বড় হয়েছ। মু'মিনের বুকের দুধ পান করেছ ও পবিত্র জীবন যাপন করেছ এবং পবিত্র থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ; আর মুমিনদের হৃদয়গুলোকে তোমার বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে শোকাহত করেছ। তাই তোমার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি তোমার ওপর বর্ষিত হোক। তুমি সে পথেই গিয়েছ যে পথে গিয়ে তোমার ভাই হযরত জাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া নবী (আ.) শহীদ হয়েছিলেন।''

এরপর রাসূল (সা.)'র সাহাবি হযরত যাবের (রা.) বলেন:

কারবালায় শোকার্ত মানুষের ঢল

''সালাম তোমাদের আত্মার প্রতি যারা হুসাইনের পাশে (শহীদ হয়ে) সমাহিত হয়েছ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তোমরা নামাজ কায়েম করেছিলে ও জাকাত আদায় করেছিলে এবং সৎ কাজের আদেশ দিতে ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে। তোমরা কাফিরদের সঙ্গে জিহাদ করেছিলে এবং আমৃত্যু খোদার ইবাদত করে গেছ।
তিনি আরো বলেন: আমি সেই আল্লাহর কসম দিচ্ছি যিনি রাসূল(সা.)-কে ন্যায্যত রাসূল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তোমরা শহীদরা যে কষ্ট ও মুসিবতের শিকার হয়েছ আমরা তার শরিক।

এ সময় আতিয়ে বলেন, আমি হযরত যাবেরকে বললাম: আমরা তো কিছুই করিনি ইমামের সাহায্যের জন্য, আমরা ঘরে বসেছিলাম আর তাঁরা তথা ইমাম ও তাঁর সঙ্গীরা শত্রুদের তিরের মোকাবেলা করেছেন।

হযরত যাবের বললেন: হে আতিয়ে! যে কেউ কোনো দলের কাউকে ভালবাসে, সে তাদের সঙ্গের লোক হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কোনো একটি দলের কাজকে পছন্দ করে সে তাদের সেই কাজে শরিক ছিল বলে ধরা হয়।''

ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম হুসাইনের (আ) কর্তিত শির মুবারক তাঁর শাহাদতের পর চল্লিশতম দিনে সিরিয়া থেকে কারবালায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং তা ইমামের পবিত্র শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ইমাম যাইনুল আবেদিন (আ) অলৌকিকভাবে কুফার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ইমাম  হুসাইন (আ)সহ কারবালার  শহীদদের লাশ দাফন করেছিলেন। অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনামতে, বনি আসাদ গোত্রের লোকেরা পাশের গ্রাম থেকে এসে জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিল। তবে আগের বর্ণনার তুলনায় এই বর্ণনাটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩১

ট্যাগ