শহীদ-সম্রাট (আ) তাঁর সঙ্গীদের বেহেশতের নির্ধারিত স্থান দেখালেন!
(last modified Sat, 29 Aug 2020 12:39:54 GMT )
আগস্ট ২৯, ২০২০ ১৮:৩৯ Asia/Dhaka
  • কারবালা ময়দানের ঠিক এখানেই আহত ইমাম হুসাইন (আ)-কে জীবন্ত অবস্থায় জবাই  করা হয়েছিল। এটি বর্তমানে উনার মাজার কমপ্লেক্সেরই অংশ
    কারবালা ময়দানের ঠিক এখানেই আহত ইমাম হুসাইন (আ)-কে জীবন্ত অবস্থায় জবাই করা হয়েছিল। এটি বর্তমানে উনার মাজার কমপ্লেক্সেরই অংশ

'ওহে কুফাবাসী! আমি তো অবাঞ্ছিত মেহমান ছিলাম না, তোমরাই আমাকে ( মুক্তিকামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য) দাওয়াত দিয়ে এখানে এনেছ।' আশুরার ঘটনা সম্পর্কে একটি কবিতায় বর্ণিত এই বক্তব্য ছিল ইমাম হুসাইনের বক্তব্য যা তিনি শত্রুদের একাংশকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।

আজ মহান তাসুয়া বা আশুরার পূর্ব দিন। ১৩৮১ বছর আগে এই দিনে অর্থাৎ ৬১ হিজরির ৯ মহররম  কুফায় ইয়াজিদের নিযুক্ত কুখ্যাত গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে শিমার কারবালায় আসে। শিমার জিয়াদের একটি চিঠি হস্তান্তর করে তাদের সেনাপতি ওমর ইবনে সাদের কাছে।ওই চিঠিতে ইমাম হুসাইন (আ.)’র ছোট্ট শিবিরের ওপর অবরোধ জোরদারের ও হামলার নির্দেশ দেয়া হয়। ইয়াজিদপন্থী সেনা সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে কারবালায়। অন্যদিকে আশুরার পূর্বরাতে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ইমামকে ত্যাগ করতে অনিচ্ছুক এবং বিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী প্রায় ১০০ জন শাহাদত-পাগল ব্যক্তির মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে, তারা সম্ভব হলে বহু বার নবীর (সা.) সন্তানের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। একজন বলেছিলেন, তিনি ৭০ বার ইমাম (আ.)’র জন্য পুড়ে যেতে প্রস্তুত এবং অন্য একজন বলেছিলেন, ইস্ আমার যদি এক হাজার প্রাণ বা জীবন থাকতো তাহলে ক্রমাগত এক হাজার বারই ইমামের জন্য জীবন দিতাম!

এদিকে নয়ই মহররম ইমামের শিবির ঘেরাও করে ফেলে ইয়াজিদ সেনারা। ইবনে জিয়াদ ও ওমর ইবনে সাদ তাদের সেনা সংখ্যার আধিক্য দেখে নিশ্চিত হয় যে সম্ভাব্য যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.)ই পরাজিত হবেন এবং নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ইরাকিরা বা অন্য কেউই ইমামকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। ( কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে দূরবর্তী কোনো কোনো অঞ্চল থেকে ইমাম ও আহলে বাইতের  উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বা কয়েক শত সমর্থক যখন অবরূদ্ধ ইমাম আ. এবং তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদেরকে সাহায্যের জন্য কারবালার কাছাকাছি পৌঁছেন ততক্ষণে ঘটে যায় আশুরার  মহাট্র্যাজেডি বা বিয়োগান্তক ঘটনা।)

শিমার আবুল ফজল আব্বাস ও তাঁর ভাইদেরকে ইয়াজিদ সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টিসূচক একটি কার্ড দিতে চেয়েছিল এই শর্তে যে তাঁরা ইমামের (আ.) পক্ষ ত্যাগ করবেন। কিন্তু বীরত্ব ও ইমামের প্রতি আনুগত্যের জন্য খ্যাত হযরত আব্বাস (আ.) তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন: তোমার ওপর ও তোমার আমিরের ওপর এবং নিরাপত্তা কার্ডের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তুমি আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে চাইছ অথচ আল্লাহর রাসূল (সা.)’র পুত্রকে নিরাপত্তা দিচ্ছ না।

ইমাম হুসাইন (আ.) নয়ই মহররমের বিকালের দিকে এক দিনের জন্য যুদ্ধ পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন যাতে আজকের (দশই মহররমের) রাতটি  শেষবারের মত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানো যায়।   সৌন্দর্যের জন্য বনু হাশিমের চাঁদ নামে খ্যাত হযরত আবুল ফজল আব্বাস (রা.) (যিনি ছিলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ.’র পুত্র ও হযরত ইমাম হুসাইন- আ.’র সৎ ভাই ) ইমামের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব পৌঁছে দেন শত্রুদের কাছে। শত্রুরা প্রথমে রাজি না হলেও পরে এ প্রস্তাবে রাজি হয়।

বিকালেই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। সঙ্গীরা আবারও তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেন। বর্ণনা করা হয় যে ইমাম তাসুয়ার দিবাগত রাতে তথা আশুরার রাতে তাদের জানান যে আগামীকাল তাঁদের সবাই শহীদ হবেন। তাঁরা সবাই শুনে খুশি হন ও মহান আল্লাহর কাছে শাহাদাতের মর্যাদা লাভের বিষয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। এমনকি ইমামের কিশোর ভাতিজা হযরত কাসেমও শহীদ হবেন জানতে পেরে বলেন যে শাহাদাত তাঁর কাছে মধুর চেয়েও মিষ্টি!!

 এক পর্যায়ে ইমাম তাঁর সঙ্গীদেরকে বেহেশতে তাঁদের নির্ধারিত স্থান দেখিয়ে দেন মহান আল্লাহর কুদরাতে। ফলে তাঁরা আরও খুশি হন। ফলে সে রাতে তাঁদের কেউ কেউ একে-অপরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করেছিলেন! এভাবে শহীদ হওয়ার আগেই তাঁরা জানলেন যে আগামীকাল শহীদ হয়ে তাঁরা সুনিশ্চিতভাবে বেহেশতে যাচ্ছেন! ইমাম খোদা-প্রদত্ত অদৃশ্যের জ্ঞানের মাধ্যমে আরও জানতে পেরেছিলেন যে তাঁর দুধের শিশু আলী আসগরও শহীদ হবেন নির্মমভাবে এবং তাও তিনি উল্লেখও করেছিলেন সে রাতে। আর এ খবর শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন হযরত কাসেম! #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৯ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ