খোলস থেকে বেরিয়ে এসে আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ইসরাইল-তুরস্ক সম্পর্ক
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i103978
তুরস্কে চলমান অর্থনৈতিক সংকট সেদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রধান খবর হয়ে আছে। সেদেশের জনগণ বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ ১৮:৫১ Asia/Dhaka

তুরস্কে চলমান অর্থনৈতিক সংকট সেদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রধান খবর হয়ে আছে। সেদেশের জনগণ বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে।

তুর্কি দৈনিক ইয়ানি চাগ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে লিখেছে, 'এরদোগান সরকার দেশ চালাতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে'। দৈনিক সুয জু'র এক খবরের শিরোনাম 'সবকিছুর দাম বেড়েছে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়'। তুরস্কের অন্যান্য দৈনিকের খবরেও প্রায় একই ধরনের শিরোনাম চোখে পড়ে এবং প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে। সব গণমাধ্যমের একই বক্তব্য আর তা হচ্ছে বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য তারা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নীতিকে দায়ী করেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং তার একে পার্টির জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে স্বয়ং এরদোগানও অসন্তুষ্ট এবং প্রায়ই তিনি কোনো না কোনো পদস্থ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করছেন।  সর্বশেষ তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায়, প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার দ্বিমুখী নীতির অংশ হিসেবে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এরদোগান সরকার অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ব্যর্থ হয়ে এখন তাদের ধারণা ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। বলা যায়, তুর্কি কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে নীতি সংশোধনের পরিবর্তে ইসরাইলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে আবারো ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে এটাকে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেই বর্ণবাদী ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

তুরস্কের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকরাম একশি ইসরাইল-আমিরাতের সম্পর্কের ব্যাপারে তুর্কি কর্মকর্তাদের লোক দেখানো সমালোচনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'আমিরাতের এ পদক্ষেপের প্রতি এরদোগান সরকারের সমালোচনা প্রশংসার যোগ্য কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তুরস্ক কি ইসরাইলের সঙ্গে বিরাজমান কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করবে?

তুরস্কের এ বিশ্লেষকের এই প্রশ্ন থেকে বোঝা যায়, প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ দেশটির অন্যান্য কর্মকর্তারা ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে আমিরাতসহ অন্যান্য আরব দেশের যে সমালোচনা করছে তা একেবারেই লোক দেখানো এবং তা কেবল গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার জন্য। এ ব্যাপারে তুরস্কের গণমাধ্যমগুলো লিখেছে, গত বেশ ক'বছর ধরে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি'র মধ্যে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হয়েছে। বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, অনেক আগে থেকে ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকলেও তা এখন আরো জোরদার করা হচ্ছে। ইসরাইলি সূত্রের উদ্বৃতি দিয়ে তুরস্কের কোনো কোনো গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুই বছরে ইসরাইল ও তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বহুগুণে বেড়েছে।

বর্তমানে এরদোগান সরকার মুসলমানদের চির দুশমন ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছে। এরদোগান প্রশাসনের এ পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অন্য আরব দেশকে যে সমালোচনা করছে তা স্রেফ লোক দেখানো। তুরস্ক সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিবর্তে বরং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে। এরদোগানের এই দ্বিমুখী চরিত্রের অর্থই হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সাথে প্রতারণা ও ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।