আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি হামলা
ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদারের রহস্য
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদে হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এতে অন্তত ১৫২ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের সময় এই পবিত্র স্থানে দখলদার সেনারা হানা দিলে ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা তাদের বাধা দেন এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। ইসরাইলি সেনারা মুসল্লিদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আহতদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আলআকসা মসজিদে বিপুল হারে উপস্থিত হতে গতকাল ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। হামাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি আজ ভোরে আলআকসা মসজিদে উপস্থিত হন।
প্রশ্ন হল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দখলদার ইহুদিবাদীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাত কেনো বেড়েছে? এর উত্তরে প্রথমেই বলতে হয় যে কয়েকটি আরব সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় মজলুম ফিলিস্তিনিরা বাইরের সাহায্যের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের মোকাবিলায় প্রতিরোধ জোরদার করাকেই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করছেন। আর তাদের প্রতিরোধের এই চেতনা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
অন্যদিকে দখলদার ইসরাইল ভেবেছিল কয়েকটি আরব সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় ইসরাইলের নিরাপত্তা বাড়বে ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রসঙ্গটি খুবই নিস্তেজ বা ম্লান হয়ে পড়বে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনিদের বেশ কয়েকটি শাহাদাত-পিয়াসি হামলা প্রমাণ করেছে যে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টি এখনও মুসলিম বিশ্বের ও পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইস্যু। আর ফিলিস্তিনিরাই এ বিষয়টিকে প্রতিরোধ জোরদারের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম বেড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হল ফিলিস্তিনিরা স্বশাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও সাহায্য পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেছেন। স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক হামলাগুলোর নিন্দা জানিয়েছেন এবং এখনও বর্ণবাদী ইসরাইলের সঙ্গে আপোষ-আলোচনার নীতিতে বিশ্বাসী বা আশাবাদী ! অন্যদিকে হামাস কুদস্ শরিফের মর্যাদা রক্ষা করতে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে সেখানে হাজির হবার ও শাহাদাত-পিয়াসি হামলার চালানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিরাও এইসব আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। অন্য কথায় মাহমুদ আব্বাসের আপোষকামী নীতি নাকচ করে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের পথই বেছে নিয়েছে।
ততৃীয় যে চালিকাশক্তি ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ-চেতনা জোরালো করছে তা হল তারা বুঝতে পেরেছে যে ইহুদিবাদীরা সামরিক ও নিরাপত্তার দিক থেকে খুবই দুর্বল। গত বছরের প্রায় এই সময়ে ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের এই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ক্ষেত্রে ইসরাইল দুর্বল বলেই ফিলিস্তিনিরা খুব সাফল্যের সঙ্গে ইহুদিবাদীদের কথিত সুরক্ষিত অঞ্চলেও শাহাদাত-পিয়াসি হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রীসভা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির নড়বড়ে অবস্থাও তাদের দুর্বলতার অন্যতম বড় দিক।
চতুর্থ যে চালিকাশক্তি ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ জোরদারের সহায়ক তা হল মুসলমানদের প্রথম কিবলাসহ ইসলামের ঐতিহ্যবাহী পবিত্র স্থানগুলোর মালিকানা ও তাদের বাপদাদার ভূখণ্ডের মালিকানার ব্যাপারে ফিলিস্তিনিদের আপোষহীনতার চেতনা। উপনিবেশবাদীদের হাতে গড়া আরব সেবাদাস সরকারগুলোর বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় আত্মপরিচিতি ও ইসলামী পরিচিতি ইতিহাসের অনেক গভীরে প্রোথিত। তাই ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ইসলামী পরিচিতি কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় সফল হচ্ছে না। ফিলিস্তিনি জাতি বহিরাগত নানা জাতি ও নানা দেশের দুর্বৃত্তদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কৃত্রিম ইহুদিবাদী জাতির মত বহুধা-বিভক্ত বা শতধা-বিভক্ত ভঙ্গুর জাতি সত্ত্বার অধিকারী নয়।
বিশ্বসমাজ যদি ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের মোকাবিলায় নিরব থেকে ইসরাইলের প্রতি পরোক্ষ সহায়তা দেয়া অব্যাহত রাখে তাহলে ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি সংঘাত বাড়তেই থাকবে, বিশেষ করে পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারে বিশ্ব-কুদস দিবস পালনের প্রাক্কালে এই সংঘাত বেড়ে যাবে। #
পার্সটুডে/আমির/১৫