ইরাক সংকট:
সংকট উত্তরণে ইরাকের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান ইরানের
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরাকের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেহরান সবসময় একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও শক্তিশালী ইরাক দেখতে চায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ইরাকে শান্তি ফিরে আসায় সন্তুষ্ট। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত আর আহতদের সুস্থতা কামনা করে। সেইসঙ্গে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। বিশেষ করে বিরাট একটি সংকট কাটিয়ে ওঠার ঘটনায় ইরান ইরাকের সরকার, জনগণ এবং সকল আইনী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার প্রশংসা করছে।
ইরাক দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকটে জড়িয়ে আছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে সংসদীয় নির্বাচনের পর, সরকার গঠন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ইরাকের সদর আন্দোলনের নেতা মোকতাদা সাদর তাদের ৭৩ জন সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করতে বলেন। সাদর আন্দোলনের প্রতিনিধিদের পদত্যাগের পর, ইরাকের শিয়া দলগুলোর সমন্বয় কমিটি, আরও কয়েকটি দলের সাথে বৈঠক করে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দেয়। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সরকার গঠনে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
মোকতাদা সাদর গত সোমবার, ২৯ আগস্ট, রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইরাকে আরেক দফা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই উত্তেজনা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নেয়। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর সাদরের সমর্থকরা বাগদাদে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রাসাদ এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে হামলা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক ডজন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।
ইরাকের পরিস্থিতি ইরানের জন্য বহু দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের আরব দেশগুলোর মধ্যে ইরানের সাথে ইরাকের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ইরানের দীর্ঘতম সীমান্ত রয়েছে ইরাকের সঙ্গে। প্রায় ১২৫৮ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত এবং ৩৫১ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে ইরাকের সঙ্গে। তাছাড়া নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের দিক থেকেও ইরান-ইরাক সম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাল প্রতিবেশী হিসেবে দুদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্কেরও উন্নয়ন হচ্ছিলো। উভয় দেশই বন্ধুত্বপূর্ণ ওই সম্পর্ককে শক্তিশালী পর্যায়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর ওপরও জোর দিয়ে এসেছে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-কাজেমির সাথে সাক্ষাতকালে বলেছিলেন: ইরান ও ইরাকের মধ্যকার সম্পর্ক সত্যিকার অর্থেই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ। ইরান-ইরাক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো অভিন্ন স্বার্থ, সুবিধা, নিরাপত্তা, সম্মান। ইরাকের অবস্থার উন্নয়নের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইরাকের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায়। ইরাকের শত্রুরা যাতে অভ্যন্তরীণ সংকটকে সুযোগে পরিণত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবার সচেতনতা কামনা করে ইরান।#
পার্সটুডে/এনএম/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।