যে কারণে সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় এরদোগান: চিন্তিত আমেরিকা
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i123106-যে_কারণে_সিরিয়ার_সাথে_সম্পর্ক_ঘনিষ্ঠ_করতে_চায়_এরদোগান_চিন্তিত_আমেরিকা
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সরকার প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা থেকে বিরত রয়েছে। বিশেষ করে করে সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
মে ১২, ২০২৩ ১৮:১২ Asia/Dhaka

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সরকার প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা থেকে বিরত রয়েছে। বিশেষ করে করে সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তুরস্ক সরকার আমেরিকাসহ অন্য মিত্র দেশ এবং ন্যাটো জোটের উস্কানিতে ২০১১ সাল থকে সিরিয়ার বৈধ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে উৎখাতের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিন নীতি যে, তুরস্কের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী সেটা ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। এ কারণে তুরস্ক সরকার সিরিয়ার সঙ্গে বিরাজমান মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তুর্কি কর্মকর্তারা ইরান, রাশিয়া ও সিরিয়ার উপস্থিতিতে মস্কোয় অনুষ্ঠিত চারপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন।

অথচ এর আগে তুরস্ক সরকার দামেস্কের সমালোচনা উপেক্ষা করে ২০১৮ সালে সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করেছিল। এমনকি তুরস্কের সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সিরিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের পরিণতির ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল। এরপর অনেক দেরিতে হলেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও অপচয়ের কথা ভেবে সিরিয়া সরকারের সঙ্গে বিদ্বেষের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরদোগানের এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতিতে অনেক বড় পরিবর্তনের ঘটনা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সিরিয়া বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যালেক্সান্ডার ম্যাক কেইভার মনে করেন, গত এক বছরে তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের তৎপরতা মোটেই যথেষ্ট নয় এবং পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পেতে এখনো অপেক্ষা করতে  হবে। তিনি আঙ্কারা-দামেস্ক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে ইরান, রাশিয়া, সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার চারপক্ষীয় আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কেননা তুরস্কে আগামী সপ্তাহে  অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে যদি এরদোগান বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনার মোড় ঘুরে যেতে পারে।  

এদিকে, ইরান ও রাশিয়া ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে যখন অনেকটাই সফল তখন আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যে কোনো উপায়ে তুরস্ক ও সিরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। কারণ আমেরিকা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার মোড়লিপনা করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না এবং তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। এ কারণে ওয়াশিংটন খুবই চিন্তিত।  

বাস্তবতা হচ্ছে, সিরিয়ার মাটিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতি তুরস্ক সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে আঙ্কারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে মেনে নিয়ে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে মোতায়েন মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিষয়টিকে নিজেদের ইচ্ছে মতো পরিচালনা করতে  চায়। তুর্কি কর্মকর্তারা গত দুই বছর ধরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরাজমান উত্তেজনা ও নানা সংকট নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিচালনার চেষ্টা করে আসছে। তারা ইসরাইলের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে আবার সিরিয়ার সাথেও উত্তেজনার অবসান ঘটানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তুর্কি কর্মকর্তারা গ্রিসের সাথে টেক্কা দিতে অন্য সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে এবং তাদের সমস্ত শক্তি এখন এদিকেই নিবন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া, তুরস্কে চলমান অর্থনৈতিক সংকটও সিরিয়ার ব্যাপারে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাদের মতে, তুরস্কের জন্য সিরিয় অনেক বড় ও লোভনীয় বাজার। সিরিয়ায় গোলযোগের কারণে তুরস্ক অনেক বড় বাজার হাত ছাড়া করায় খোদ আঙ্কারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সিরিয়ার বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়া সরকার অবকাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়ায় তুরস্ক সেখানে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। মোটকথা এ দুটি মুসলিম দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সমগ্র এ অঞ্চলের জনগণের জন্য কল্যাণ  বয়ে আনবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। #     

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।