মার্কিন মানবাধিকার লঙ্ঘন: সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে নির্যাতন কর্মসূচি পর্যন্ত
-
মার্কিন মানবাধিকার লঙ্ঘন: সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে নির্যাতন কর্মসূচি
পার্সটুডে-যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবী করে, কিন্তু ১৭৯৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির ৪৬৯টি সামরিক হস্তক্ষেপের নথি এবং প্রতিবেদন তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা নিজেকে বিশ্বে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে, কিন্তু বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশটির কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করলে এই দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র উপস্থাপন করা হয়। ব্যাপক সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে পদ্ধতিগত নির্যাতন কর্মসূচি পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি অন্ধকার রেকর্ড রয়েছে। পার্সটুডে থেকে এই সংবাদ প্যাকেজে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারের সেই অন্ধকার রেকর্ড; যুদ্ধের উসকানি থেকে নির্যাতন পর্যন্ত, সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস
মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (CRS) এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটি ১৭৯৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪৬৯টি সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে ১৯৯১ সালে শীতল যুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে, মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, ওয়াশিংটন ২৫১টি সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে প্রায় সমস্ত ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয় দেশসহ বেশিরভাগ আফ্রিকার দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গোপন নির্যাতন কর্মসূচি
মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি হল বিভিন্ন কারাগারে দেশটির নির্যাতন কর্মসূচি। গুয়ান্তানামো বে-এর একজন বন্দী "আবু জুবাইদাহ" ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে গোপন সিআইএ সাইটগুলোতে তার ওপর পরিচালিত নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ৪০টি চিত্রকর্মের একটি সিরিজ তৈরি করেছিলেন। নির্যাতন কর্মসূচির বিবরণ গোপন রাখার জন্য সিআইএ এবং এফবিআই বছরের পর বছর চেষ্টা করার পরেও ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল। ইরাকের আবু গারিব কারাগার মার্কিন অপরাধের আরেকটি উদাহরণ যেখানে বন্দীদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে।
আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ
আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনী অসংখ্য যুদ্ধাপরাধ করেছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিল ২৯শে আগস্ট, ২০২১ তারিখে কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলা, যা তারা প্রথমে "নির্ভুল অভিযান" হিসেবে রক্ষা করেছিল, কিন্তু জনমতের চাপ ও সুদৃঢ় প্রমাণের পর, এটিকে "দুঃখজনক ভুল" বলে অভিহিত করে। ওই হামলায় সাত শিশুসহ ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ওয়াশিংটন কেবল এই অপরাধগুলো স্বীকার করতেই অস্বীকার করে নি বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আফগানিস্তানে তার যুদ্ধাপরাধের তদন্তও বন্ধ করে দিয়েছে।
ভিয়েতনামে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ
ভিয়েতনাম যুদ্ধ আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটি। দেশটি ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ করে। ওই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ভিয়েতনামী নিহত হয়েছিল। এজেন্ট অরেঞ্জের ব্যবহার কেবল সেই সময়ে মানুষকেই হত্যা করেনি, বরং ভিয়েতনামীদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে জন্মগত ত্রুটি এবং ক্যান্সার আকারে তার চিহ্নও রেখে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় ভিয়েতনাম এবং তার প্রতিবেশীদের উপর আমেরিকা আরও বেশি বোমাবর্ষণ করেছিল এবং এর প্রভাব আজও রয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মানবাধিকারকে সমর্থন করার পরিবর্তে, দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ। ব্যাপক সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে নির্যাতন কর্মসূচি এবং যুদ্ধাপরাধ পর্যন্ত মার্কিন মানবাধিকার রেকর্ড মানবাধিকার রক্ষার দাবি করা মানবিক মূল্যবোধের পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের একটি অধ্যায়। এই তথ্যগুলো মানবাধিকারের প্রতি আমেরিকার দাবির বৈধতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে।#
পার্সটুডে/এনএম/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।