সিরিয়ায় মার্কিন ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় পর্যায় ও গতকালের ভয়াবহ ড্রোন হামলা
(last modified Fri, 06 Oct 2023 12:40:05 GMT )
অক্টোবর ০৬, ২০২৩ ১৮:৪০ Asia/Dhaka

সিরিয়ার হোমস প্রদেশে একটি সামরিক কলেজের ছাত্রদের শিক্ষা সমাপনী উৎসব অনুষ্ঠানে বিদেশী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় অন্তত ৮০ জন শহীদ ও ২৪০ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন সেনা অফিসার এবং বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুও রয়েছে। নিহতদের সংখ্যা ১১০-এ উন্নীত হয়েছে বলে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে। ইসলামী ইরান ও  লেবাননের হিজবুল্লাহ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানালেও মার্কিন সরকার ও তার সহযোগী ইউরোপীয় মহল এখনও এই হামলার নিন্দা জানায়নি!  

সিরিয়ার হোমসে মিলিটারি একাডেমিতে গতকালের সন্ত্রাসী হামলার পর আজ (শুক্রবার) এক শোকবার্তায় ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন- সিরিয়ায় পরিপূর্ণভাবে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শত্রুরা। এরই অংশ হিসেবে গত কয়েক মাসে সেখানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। দখলদার শক্তিসহ সন্ত্রাসীদের সহযোগী বিদেশি শক্তি এসব হামলার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের পাশাপাশি লজিস্টিক সাহায্য দিচ্ছে।  

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ইদলিব প্রদেশের সন্ত্রাসী চক্র তথা মার্কিন মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে সিরিয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের ওপর দেশটির সরকারি সেনাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এই প্রদেশটিই হচ্ছে সিরিয়ার একমাত্র প্রদেশ যেখানে সিরিয়ার সরকারি সেনাদের সন্ত্রাস-বিরোধী হামলার বিরোধিতা করে আসছে মার্কিন সরকার। এ অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা সিরিয়ার সরকারি সেনাদের ওপর হামলার যে কোনো সুযোগকে ব্যবহার করে আসছে। 

কয়েক দিন আগে (গত রোববার) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভবনের সামনে যে দুই কুর্দি সন্ত্রাসী বড় ধরনের বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল তারা সিরিয়া থেকেই তুরস্কে প্রবেশ করেছে বলে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গত বুধবার দাবি করেছেন। তাই এটা স্পষ্ট সিরিয়াকে ঘিরে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ওদিকে সিরিয়ায় তৎপর কুর্দি সন্ত্রাসীসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি মার্কিন সহায়তা বেড়ে যাওয়ার নানা খবরও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। মার্কিন সরকার আসাদ সরকারকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়ে আবারও সিরিয়াকে কয়েকটি দেশে ভাগ করার ষড়যন্ত্র ও সিরিয়ার নানা সম্পদ চুরি করা ও লুট করা নিয়ে মেতে উঠেছে যা সিরিয়াকে নিয়ে মার্কিন সরকারের প্ল্যান-বি বা দ্বিতীয় ষড়যন্ত্রের নীল-নক্সার অংশ।  কুর্দিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠন করা ছাড়াও মার্কিন সরকার সেখানে আসাদ-বিরোধী আরব বা তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দিয়ে আরও একটি নতুন রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা করছে যা গড়ে তোলা হবে সিরিয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অঞ্চলগুলোতে। এই গোষ্ঠীগুলোর গেরিলা বা সন্ত্রাসীরা এরিমধ্যে কুর্দি সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

তবে আপাতত মার্কিন সরকারের প্রধান টার্গেট হল হাসাকা এলাকার তেল ও গ্যাস-সম্পদগুলোর ওপর কর্তৃত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে সিরিয়া, ইরাক ও জর্দানকে সংযুক্তকারী একটি মহাসড়ক বন্ধ করার চেষ্টা চালানো যাতে ওই মহাসড়ক দিয়ে লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে (ইরানি?) অস্ত্র সাহায্য পৌছানো সম্ভব না হয়। মার্কিন সরকার এ অঞ্চলের পরাজিত তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস-এর অবশিষ্ট সন্ত্রাসীদের আবারও শক্তিশালী করার ও বন্দি সন্ত্রাসীদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করছে। নিহত দায়েশ সন্ত্রাসীদের কিশোর ও কিশোরী সন্তান এবং এমনকি শিশু সন্ত্রাসীদেরও মার্কিন তত্ত্বাবধানে সন্ত্রাসী হামলার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে খবর আসছে। এ ধরনের সাত হাজার সন্ত্রাসীকে মার্কিন সহায়তায় সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে তুর্কি দৈনিক ইয়েনি শাফাক খবর দিয়েছে। সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী হামলাগুলোর ৭৫ শতাংশই এইসব সন্ত্রাসীদের কাজ বলে দৈনিকটি উল্লেখ করেছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা স্পষ্ট সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার কূটনৈতিক সাফল্যগুলো ইহুদিবাদী ইসরাইল ও এর দোসর পশ্চিমা শক্তিগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। আরব রাষ্ট্রগুলো একে একে আবারও সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং আরব লিগে সিরিয়াকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে তারা। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে চীনে আসাদের  সফরও ছিল লক্ষণীয়। তাই দেশে-বিদেশে সিরিয়ার আসাদ সরকারের সাফল্যে ভীত-সন্ত্রস্ত পাশ্চাত্য ও ইহুদিবাদী চক্র সিরিয়ায় আবারও সন্ত্রাসীদের চাঙ্গা করতে চায়। আসাদ সরকার দেশ পুনর্গঠনের কাজে যাতে সফল ও মনোযোগী হতে না পারে এবং সিরিয়ার সম্পদ লুট করার কাজও আরও যাতে সহজ হয় এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন সরকারের বর্তমান সিরিয়া নীতির মূল লক্ষ্য ।

উল্লেখ্য, সিরিয়ার আসাদ সরকার ২০১২ সালে সেদেশ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বের করে দেয়। মার্কিন সরকার এখন দামেস্ক থেকে তার দূতাবাস সরিয়ে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত হাসাকায় স্থাপন করতে চায় বলে ঘোষণা করেছে যা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। উল্লেখ্য সিরিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের দিকে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দেয় সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকার ও ইসরাইলসহ তাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী গোষ্ঠীগুলো। আসাদ সরকার ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখায় এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে সহায়তা দিতে থাকায় এইসব শক্তি আসাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।   #

পার্সটুডে/০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ