ফিলিস্তিনিদের জীবন ইসরাইলিদের চেয়ে কম মূল্যবান নয়: রাজা আবদুল্লাহ

ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা, জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং দুই-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ।

ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা, জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং দুই-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ।

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত নিরসনে মিসরের রাজধানী কায়রোর শান্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। রাজা আবদুল্লাহ বলেন, 'গাজা, পশ্চিম তীর ও ইসরাইলে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ ও শোকাহত। সব বেসামরিক ব্যক্তির জীবনই গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বলেন, 'গাজায় যে নিরবচ্ছিন্ন বোমা হামলা চলানো হচ্ছে, আমরা বলেছি যে- এটা নিষ্ঠুর এবং অসংবেদনশীল- প্রতিটি স্তরেই। এটা অবরুদ্ধ ও অসহায় মানুষের সম্মিলিত শাস্তি। এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা যুদ্ধাপরাধ।'

তিনি 'বৈশ্বিক নীরবতা' পালন এবং পূর্ববর্তী সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী না করায় নেতাদের সমালোচনা করেন।

জর্ডানের রাজা বলেন, 'গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এখনো বিশ্বের বেশিরভাগ অংশই নীরবতা পালন করছে। উপরন্তু আরব বিশ্বকে প্রকটভাবে এবং স্পষ্ট শুনতে হচ্ছে যে, ফিলিস্তিনিদের জীবন ইসরায়েলিদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবন অন্যদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বলেন, 'ইসরাইল আক্ষরিক অর্থেই গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষুধার্ত রেখেছে, কিন্তু কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা আশা, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের অনাহারে ভুগছে।' বিষয়টিকে 'দখলদারত্বের অনাচার' বলেও অভিহিত করেছেন আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, 'ইসরাইলের নেতৃত্বকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের কোনো সামরিক সমাধান নেই। তারা ৫০ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজেদের দখলে রাখতে পারে না, তাদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না এবং ফিলিস্তিনিদের জীবন ইসরাইলিদের চেয়ে কম মূল্যবান নয়।'

জর্ডানের রাজা বলেন, 'কট্টরপন্থী ইসরাইলি নেতৃত্ব শান্তির পরিবর্তে কেবল নিরাপত্তার ওপর দৃষ্টিপাত করেছে, যা উভয় পক্ষের চরমপন্থিদের ক্ষমতায়ন করেছে।'

পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের উদ্দেশে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ বলেছেন, আমাদের অঞ্চল একটি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। ইসরাইলের জনগণের প্রতি আমাদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ বার্তাটি হলো- আমরা আপনাদের এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে আপনাদের সন্তান এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের আর ভয়ের মধ্যে বসবাস করতে হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো একটি অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য যা যা করা দরকার তা করা, যা আমাদের দুই-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তিতে নিয়ে যেতে পারে।'

জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ আরও বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্য এবং সমগ্র বিশ্বের জনগণের জন্য একটি নিরাপদ এবং নিশ্চিত ভবিষ্যতের এখন একটাই পথ- ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের জন্য- এই বিশ্বাসের সঙ্গে শুরু করা যে, প্রতিটি মানুষের জীবন সমান মূল্যের। দুটি রাষ্ট্র, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল, নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ভূখণ্ড এবং শান্তি ভাগাভাগি করবে। আমাদের এখনই কাজ করার সময়।'

সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই গাজায় ইসরাইলি হামলা থামাতে হবে এবং সংকটের সমাধানে এমন একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ সুগম হয়।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিসও বলেছেন, নতুন একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে যেখানে ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকেও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হবে।  

মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির উদ্যোগে সাড়া দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর সরকার-প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।