মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাগদাদ সফরের পরই ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর তেহরান সফরের রহস্য
(last modified Tue, 07 Nov 2023 09:03:17 GMT )
নভেম্বর ০৭, ২০২৩ ১৫:০৩ Asia/Dhaka

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আস-সুদানি তেহরান সফরে এসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ নেতার সাথে সাক্ষাৎ ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেছেন। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো তিনি তেহরান সফর করেছেন। তার এ সফর বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরাক সফরের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ইরান সফরে আসেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন গত রোববার রাতে বাগদাদে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে কয়েকটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আম্মান বৈঠকে অংশ নিতে জর্ডান গিয়েছিলেন। জর্ডানের আগে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো ব্লিঙ্কেন তেল আবিব যান। ধারনা করা হচ্ছে, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী তেহরান সফরের সময় আমেরিকার পক্ষ থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর এক মাস পেরিয়ে গেছে। গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের কারণে, ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোও ইরাকে আমেরিকান ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে। মার্কিনীরা মনে করে, ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো ইরান প্রভাবিত, তাই ধারণা করা হচ্ছে, তারা ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে তিনি যেন ইরানকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, ইরাকি গোষ্ঠীগুলো যেন আমেরিকান ঘাঁটিতে হামলা না চালায়। কিন্তু ইরান এসব গোষ্ঠীর ওপর তার প্রভাব থাকার কথা অস্বীকার করে বলেছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের আল-আকসা ঝড় অভিযান প্রমাণ করেছে যে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ঠিক তখন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী তেহরান সফরে এলেন। গত এক মাস ধরে গাজায় ইসরাইলি বিরামহীন বোমা বর্ষণে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে যাদের মধ্যে চার হাজার শিশু রয়েছে। অন্য আরব সরকারগুলোর মতো ইরাকও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে। গাজা সংকট নিয়ে কায়রো সম্মেলনে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র আরব নেতা যিনি ইসরাইল শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং গাজায় এই সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।

যাইহোক, ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ নেতার সাথে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে, বায়তুল মোকাদ্দাস দখলদার ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের মোকাবেলায় গাজার নির্যাতিত জনগণকে সমর্থন দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া সাক্ষাতে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গাজার করুণ পরিস্থিতি এবং এই নৃশংসতার ঘটনায় সমস্ত মানুষের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "প্রথম দিন থেকেই ইসরাইলি আগ্রাসনে এটা প্রমাণ হয়েছে যে যুদ্ধ পরিচালনায় আমেরিকানদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ইসরাইলের অপরাধ অব্যাহত থাকার পেছনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ ভূমিকার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।" আয়াতুল্লাহিল খামেনেয়ী আরো বলেন, 'আমেরিকা থেকে সামরিক ও রাজনৈতিক সাহায্য না পেলে, ইসরাইল টিকতে পারতোনা।'

এ সাক্ষাতে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীও গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে এই ছোট্ট অঞ্চলের জনগণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিশোধ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন যে, ইরাকের সরকার ও জনগণ এবং সেইসাথে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গ্রুপ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে প্রথম সারিতে রয়েছে। একই সাথে ইরানের সাথে সুর মিলিয়ে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী গাজা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজ ও মানবাধিকার দাবিদারদের  নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান গাজা সংকটসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে ইরান ও ইরাকের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যাকিনা এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১১ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।