গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনা হতাহতের সংখ্যা কেন বেড়ে গেল?
-
গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনা হতাহতের সঙ্গে কেন বেড়ে গেল?
পার্সটুডে- গাজা যুদ্ধে সম্প্রতি ইসরাইলি সেনা মারা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। তাদের এই পরিস্থিতির কিছু কারণ রয়েছে।
আল-মায়াদিন নিউজ এজেন্সি মঙ্গলবার এক নিবন্ধে লিখেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান "গিডিয়ন'স চ্যারিয়ট" শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খান ইউনুস ও শোজাইয়াহ এলাকায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, গাজার খান ইউনুসে একটি সাঁজোয়া যানে হামলায় ১৬ জন সেনার প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ৮ মার্চের পর এটিই সবচেয়ে সফল অভিযান।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় সংঘাতের গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ব্যাপক সেন্সরশিপ সত্ত্বেও এমন বহু ঘটনা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীতে। এর ফলে তাদের অনেকেই যুদ্ধের ধারাবাহিকতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এবং কেউ কেউ রিজার্ভ বাহিনীতে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই অবস্থার কারণ কী?
নতুন বিস্ফোরক ব্যবহার করছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা
গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিশেষ করে কাস্সাম এবং কুদস ব্রিগেড নতুন ধরণের হাতে তৈরি বোমা ব্যবহার করছে, যার মধ্যে কিছু বোমা যেমন "শোয়াজ" এবং "সাকিব" মাটিতে পেতে রাখা হয় এবং শত্রুর ট্যাঙ্ক ও ভারী যান এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সেনাদের হতাহতের ঘটনাও ঘটে এসব বোমায়। প্রতিরোধ সংগ্রামীদের হাতে এখন প্রচুর পরিমাণে এ ধরণের বিস্ফোরক রয়েছে।
মিশ্র কৌশলের অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামীদের অভিযান পরিচালনার কৌশলগত ক্ষমতা বেড়েছে এবং তারা বিভিন্ন এলাকায় দক্ষতার সঙ্গে বড় ধরণের অভিযান চালাচ্ছে। এ ধরণের অভিযান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় আকারের বোমার বিস্ফোরণের মাধ্যমে শুরু হয় এবং তারপরে মাঝারি ও হালকা মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানো হয়। কয়েকদিন আগে শোজাইয়াতে পরিচালিত অভিযানটি এই পর্যায়ের ছিল। এ ধরণের মিশ্র কৌশলের অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- তারা শত্রু-সৈন্যদের যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দেয় না। এর ফলে শত্রুরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় এবং তুলনামূলক বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে।
ইসরাইলের যুদ্ধ কৌশলের পুনরাবৃত্তি
দখলদার ইসরাইল একই ধরণের যুদ্ধ কৌশল বারবার ব্যবহার করছে। এ কারণে শত্রুদের গতিপথ সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে পেরেছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা এবং তারা আগে থেকেই বুঝতে পারছে শত্রুরা কোন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করছে। অসংখ্য ছবিতে দেখা গেছে, ইহুদিবাদী সৈন্যরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিরোধ বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই বলে সমালোচনা হচ্ছে যে, তারা যুদ্ধের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কেবল সৈন্যদের যুদ্ধের মনোভাব হ্রাসের কারণেই নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের কারণে তারা কৌশলগত দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এসব কারণে শত্রুদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।
ইসরাইল পুরনো সরঞ্জাম ব্যবহার করছে
ইহুদিবাদী বাহিনীর মধ্যে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির চতুর্থ কারণ হলো- ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাবাহিনী তাদের অভিযানে বাতিল সরঞ্জামগুলো আবার ব্যবহার করছে। এর ফলে প্রতিরোধ বাহিনীর অভিযানের ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইহুদিবাদীরা একেবারে পুরানো ও জীর্ণ ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করছে। এগুলো এখন অনেক ক্ষেত্রেই বিস্ফোরণের ফলে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় বা পুড়ে যায়। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে এমনটি ঘটছে। ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামিরও এই দায়িত্ব গ্রহণের সময় এই বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছিলেন। বুমা, শিজারিত, এম১৩৩ মডেলের সাজোয়া যান এবং তৃতীয় প্রজন্মের মেরকাভা ট্যাঙ্কের মতো ট্যাঙ্ক বহু বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি আবার এগুলোকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে ডি-নাইন বুলডোজারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এখন তুলানমূলক কম নিরাপত্তার সরঞ্জাম, সাঁজোয়া যান এবং ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিরোধ বাহিনী সহজেই তাদের সরঞ্জামগুলোকে ঘায়েল করতে পারে।
আল-মায়াদিন এই বলে নিবন্ধের উপসংহার টেনেছে যে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা যাই হোক না কেন যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই আরও বাড়তে থাকবে এবং দখলদারদের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রিসভার পতনের আশঙ্কা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষকরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে দখলদার ইসরাইলের পতনের পর এই আশঙ্কা বেড়েছে।#
পার্সটুডে/এসএ/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।