গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধ-বিরতি মানতে ইসরাইলের বাধ্য হওয়ার রহস্য
(last modified Tue, 21 Nov 2023 09:16:51 GMT )
নভেম্বর ২১, ২০২৩ ১৫:১৬ Asia/Dhaka

অবশেষে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে গাজার ওপর হামলা থামাতে বাধ্য করার ব্যাপারে সফল হতে যাচ্ছে হামাস ও হিজবুল্লাহসহ প্রতিরোধ শক্তিগুলো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে শিগগিরই তথা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতির চুক্তি সম্পাদনের ঘোষণা দেবে হামাস। ইরানের প্রেসটিভির খবরে বলা হয়েছে, হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, যুদ্ধ-বিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে দু-পক্ষ তথা হামাস ও দখলদার ইসরাইল। সম্ভাব্য  চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল গাজার ভূখণ্ডে বোমা হামলা এবং স্থল অভিযান বন্ধ করবে ৫ দিনের জন্য। আর এর বিনিময়ে ৫০ থেকে ১০০ জন ইসরাইলি যুদ্ধ-বন্দিকে মুক্তি দেয়া হবে।  

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজার স্থল যুদ্ধে ইসরাইলের বহু সেনা, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে এবং লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও ইসরাইলের উত্তর-সীমান্তে হামলা জোরদার হওয়ায় ইসরাইল বেশ বেসামাল অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নিখুঁত হামলায় হতাহত হয়েছে ইসরাইলের বহু সেনা এবং বেশ কয়েটি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। কোনো কোনো ইসরাইলি ঘাঁটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ওদিকে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহও ইসরাইলের কোনো কোনো সামরিক অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। আনসারুল্লাহ ইসরাইলের জন্য রসদবাহী এক বিশাল জাহাজও আটক করেছে লোহিত সাগরে।  ফলে ইসরাইল বেশ চাপের মুখে পড়েছে রণাঙ্গনে। মার্কিন সরকার ইসরাইলের প্রধান সহযোগী হওয়ায় ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপরও ক্রমেই হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিরোধ অক্ষের কোনো কোনো গোষ্ঠী। ফলে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকেও হয়তো ইসরাইলের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছিল।

ইসরাইলের ভেতরেও যুদ্ধ-বিরতির জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ইসরাইলে হামাসের অতর্কিত হামলার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভুল ও দিশাহারা পদক্ষেপের কারণে প্রায় সাড়ে তিনশত ইসরাইলি নাগরিক নিহত হওয়ার খবর ফাঁস হওয়ায়ও ঘরোয়াভাবে ব্যাপক চাপের শিকার হয়েছে যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সরকার।   

হামাসকে দুর্বল করা বা ধ্বংস করতে এবং  ইসরাইলি যুদ্ধ-বন্দিদের মুক্ত করার জন্য স্থল-অভিযান ও বোমা হামলা কার্যকর বলে প্রমাণ হয়নি। অন্য কথায় ইসরাইল হামাসের তেমন কোনো ক্ষতিই করতে পারেনি ৪৬ দিন ধরে অভিযান চালিয়েও। অথচ গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ও বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর ইসরাইলের পাশবিক গণহত্যা আর অমানবিক অবরোধ অব্যাহত থাকায় বিশ্ব-জনমত এবং বিশ্বের অনেক সরকার ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবাদ জোরদারের মাধ্যমে। বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানিয়েছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বা মন্ত্রী যুদ্ধ-অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন অথবা স্থগিত করেছে। আর ইসরাইলের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও লক্ষ্যনীয়।   

তাই এটা স্পষ্ট ইসরাইল অত্যন্ত অসুবিধাজনক অবস্থার কারণেই যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করতে যাচ্ছে যা হামাসসহ প্রতিরোধ অক্ষের জন্য বড় ধরনের বিজয়ের সূচনা করবে বলে মনে করা যায়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ
 

ট্যাগ