পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকার নতুন আগ্রাসী নীতির নেপথ্যে
ইহুদিবাদী ইসরাইলের কৌশলগত মিত্র হিসাবে আমেরিকা লোহিত সাগরে তেল আবিব সরকারের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গার্ডিয়ান অফ ওয়েলফেয়ার নামে পরিচিত একটি সামুদ্রিক জোট গঠনের ঘোষণা দেয়। এ জোটকে ব্রিটেন ছাড়া ইউরোপের আর কোনো দেশ স্বাগত জানায়নি। এ কথিত জোট লোহিত সাগর এবং বাব আল-মান্দাব প্রণালীতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দাবির করে ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার হামলা করেছে এবং এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) ঘোষণা করেছে যে সোমবার ২২ জানুয়ারি সানার সময় ২৩:৫৯ মিনিটে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডার সমর্থনে মার্কিন নৌবাহিনী এবং ব্রিটিশ বিমান বাহিনী এবং নেদারল্যান্ডস ইয়েমেনের বিপ্লবী আনসারুল্লাহ বাহিনীর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। সেন্টকম দাবি করে যে এসব টার্গেটগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, লঞ্চার, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার, সুবিধা এবং অস্ত্রের ডিপো।
ইয়েমেনের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আজ রাতের হামলাকে সানায় সবচেয়ে মারাত্মক হামলা বলে মনে করা যেতে পারে।"
জানা গেছে যে এসব হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের লক্ষ্য হল মার্কিন এবং ব্রিটিশ জাহাজের পাশাপাশি লোহিত সাগরে, বাব আল মান্দাব এবং এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরাইলগামী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে দুর্বল করা।
গত কয়েক মাস ধরে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সমর্থিত সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধের সমর্থনে লোহিত সাগর এবং বাব আল-মান্দাব প্রণালীতে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে এবং ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধযজ্ঞ বন্ধ না হলে ইসরাইলি জাহাজে হামলা অব্যাহত থাকবে বলেও ইয়েমেন ঘোষণা দেয়। এরপর ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী যারা তাদের জাহাজ নিরাপদ করতে অক্ষম এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমেরিকার কাছে ধরনা দেয় কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি নতুন নৌ জোট গঠনও এতে কাজ করেনি। ইয়েমেনের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য মুহাম্মদ আলী আল-হুথি বলেছেন: "ঘোষিত নৌ জোটের লক্ষ্য হল ইসরাইলকে রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক জাহাজীকরণ নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার দেশ যেকোনো মার্কিন হামলার সমুচিত জবাব দেবে।"
দখলকৃত ফিলিস্তিনের দিকে অগ্রসর হওয়া বা ইহুদিবাদী শাসনের সাথে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ইয়েমেনি হামলার ফলে ইসরাইলের ব্যপক ক্ষতি করার পাশাপাশি তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সাথে সামুদ্রিক বাণিজ্যের খরচ বিশ্বে (বিশেষ করে পশ্চিমা শক্তির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমেরিকার দাবি ইয়েমেনিদের কর্মকাণ্ডে লোহিত সাগরে সমুদ্র পরিবহনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও নৌ জোট গঠনের আসল উদ্দেশ্য ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষা করা। গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী বিমান ও স্থল হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে জো বাইডেনের সরকার ইহুদিবাদী সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করেছে।
ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে যে লোহিত সাগরে একটি নৌ জোট গঠনের ফলে ইহুদিবাদীদের নিরাপত্তা বাড়বে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের আগ্রাসী পদক্ষেপ বিশেষ করে ইয়েমেনে বারবার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেবল উত্তেজনা বাড়িয়েই তুলছে এবং পশ্চিম এশিয়ায় আরও আগুন উসকে দেওয়ার জন্য ইহুদিবাদী শাসকদের নেতৃবৃন্দের অবৈধ দাবির প্রতি সমর্থন দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান একটি নতুন বিবৃতিতে বলেছেন: আমরা আমেরিকানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এবং সতর্কতা দিয়েছি যে লোহিত সাগরে এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সাথে তাদের যৌথ পদক্ষেপ ছিল একটি "কৌশলগত ভুল"। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, "ইয়েমেনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ড আক্রমণ শুরু করার একই সময়ে স্যাটেলাইটের চিত্রগুলো দেখায় যে প্রায় ২৩০টি বাণিজ্যিক এবং তেল জাহাজ লোহিত সাগরে চলছিল। এর অর্থ হল তারা ইয়েমেনিদের কাছে ভালোভাবে এই বার্তা পেয়েছে যে, দখলদার ইসরাইলের বন্দরে যে জাহাজগুলো যাচ্ছে কেবল সেগুলোই ইয়েমেনিদের দ্বারা বন্ধ করা হবে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।