ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
(last modified Tue, 14 May 2024 14:57:10 GMT )
মে ১৪, ২০২৪ ২০:৫৭ Asia/Dhaka
  • ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ঘোষণা করেছে যে ১৯৪৮ সালের নাকবা বা বিপর্যয় দিবসের পর থেকে ফিলিস্থিনের ভিতরে এবং বাইরে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।

'নাকবা' শব্দটি ফিলিস্তিনি এবং জন সাধরণের স্মৃতিতে দুটি খুব খারাপ স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রথমত ১৯৪৮ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইল  গঠন এবং দ্বিতীয়ত সেই সময় তাদের জন্মভূমি থেকে ৮ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কার। নাকবা দিবসটি কেবল সেই বছর ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তারই প্রতীক নয় বরং গত কয়েক দশক ধরে এই জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া কষ্ট ও সমস্যারও প্রতিনিধিত্ব করে।

৬ টিরও বেশি শহর ও গ্রাম ধ্বংস, ফিলিস্তিনি এলাকা দখল এবং এগুলোকে ইহুদিবাদী বসতিতে রূপান্তর, ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন, ফিলিস্তিনি ঐতিহ্য এবং জাতীয় পরিচয়ের চিহ্ন ধ্বংস করা  ইত্যাদি ১৯৪৮ সাল থেকে দখলদার শাসক গোষ্ঠীর নানা কর্মের মধ্যে রয়েছে।

এসব অপরাধের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মনে হচ্ছে ইহুদিবাদীদের এই চেষ্টা ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে।  

এই বিষয়ে ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ঘোষণা করেছে যে ফিলিস্তিন এবং এর বাইরে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৯৪৮ সালের নাকবার পর থেকে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।

১৯৬৭ সালের জুনে যুদ্ধের পরে প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি এবং ২ লাখ ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও ২০২৩ সালের শেষে বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ১৪.৬৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।

এই পরিসংখ্যান অনুসারে, এর মধ্যে ৫.৫৫ মিলিয়ন মানুষ ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে বাস করে এবং প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি ১৯৪৮ সালে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে বাস করে। এছাড়া আরব দেশে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ৬.৫৬ মিলিয়ন এবং প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনি বিদেশে অন্যান্য দেশে বসবাস করছে।

ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এইভাবে ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ৭.৩ মিলিয়নে পৌঁছেছে যেখানে ইহুদিদের সংখ্যা ২০২৩  সালের শেষ নাগাদ ৭.২ মিলিয়নে অনুমান করা হয়েছে যার অর্থ হল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের চেয়ে  ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেশি।

এই বিবৃতিতে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ৭৬ বছরের সংঘাতে ফিলিস্তিনি শহীদের সংখ্যা সম্পর্কেও বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় ১৯৪৮ সালের নাকবা  থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে শহীদ হয়েছে।

এই প্রতিবেদন অনুসারে ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল  আল-আকসা ইন্তিফাদার শুরু পর্যন্ত  ফিলিস্তিনি শহীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার শহীদ এবং  অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত  ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বর্বর আগ্রাসনে ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

ফিলিস্তিন পরিসংখ্যান সংস্থা আরও জানিয়েছে যে গাজা যুদ্ধে ১৪ হাজার ৮শো ৭৩ টিরও বেশি শিশু, ৯ হাজার জন নারী এবং ১৪১ জনেরও বেশি সাংবাদিক এবং ৭ হাজারের বেশি নাগরিক নিখোঁজ রয়েছে যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।

এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিম তীরে দখলদার শাসকদের গাজা আক্রমণের শুরু থেকে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় ৪৯২ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

আজ ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী অনেক সমস্যার মোকাবেলা করছে। একদিকে যেমন তাকে প্রবল অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের সম্মুখীন হতে হচ্ছে অন্যদিকে এর অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে এমনকি মিত্রদেশ ও সমর্থনকারী দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তার মধ্যে প্রধান একটি হল আমেরিকা।

কয়েক দশকের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পর ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছাড়াও ফিলিস্তিন থেকে লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরাক পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিরোধ ফ্রন্টকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এটি এমন একটি জোট যেটি ইহুদিবাদীদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ গাজায় প্রতিরোধের প্রবল পাল্টা হামলার পাশাপাশি একদিকে ইয়েমেনিরা লোহিত সাগর, আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে ইসলাইলের সমুদ্র বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অন্যদিকে হিজবুল্লাহ তার সেনাবাহিনীর শক্তির একটি অংশ ব্যবহার করে দখলকৃত অঞ্চলের উত্তরাঞ্চলে নিজেদের দখলে নিয়েছে। ইরাকি প্রতিরোধ শক্তিও তেল আবিবের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোকে লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ