খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটি জ্ঞানমূলক চিঠি পুনরায় পাঠ করুন
ইসরাইলকে সমর্থনকারী খ্রিস্টান সম্প্রদায় তওবা করুন
ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করার এবং নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করার পরপরই পশ্চিমা গির্জার নেতাদের এবং খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদদের কাছে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের একটি খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ চিঠির প্রধান অংশগুলো পর্যালোচনা করছি।
এই চিঠিতে বলা হয়েছে: আমরা দৃঢ়ভাবে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের এইভাবে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা নিজেদেরকে এবং আমাদের সহ খ্রিস্টানদেরও মনে করিয়ে দিচ্ছি যে যে ঈশ্বর অসহায় ও নিপীড়িতদের ঈশ্বর এবং ঈসা (আ) ক্ষমতাশালীদের তিরস্কার করেছিলেন এবং নিপীড়িতদের উপরে তুলেছিলেন।
সঠিক কাজ করতে শিখুন; ন্যায়বিচারের পাশে থাকুন; নিপীড়িতদের রক্ষা করুন" (ইশাইয়া ১৭:১)।
আমরা ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান জনগণের সংগঠন এবং আন্দোলন এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা আমাদের দেশে সহিংসতা এবং বর্বরতার নতুন মাত্রার প্রতি অত্যন্ত বেদনা ও পরিতাপের সঙ্গে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই চিঠি লেখার সময় ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর নৃশংস ইসরাইলি বোমা হামলায় আমরা কয়েকজন বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছিলাম। বোমা হামলায় সেই খ্রিস্টানরাও ছিলেন যারা গাজার ঐতিহাসিক গ্রীক অর্থোডক্স চার্চে আশ্রয় নিয়েছিল। আমাদের দেশে চলমান যুদ্ধে আমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয় ও আতঙ্ককে কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে সহিংসতা এবং জাতীয় ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের জন্য অনেক পশ্চিমা খ্রিস্টানদের প্রশ্নাতীত সমর্থন দেখে আমরা আতঙ্কিত। আমরা এই চিঠিটি পাশ্চাত্যের ধর্মতত্ত্ববিদ এবং গির্জার নেতাদের চ্যালেঞ্জ করার জন্য লিখছি যারা ইসরাইলকে কোনো সমালোচনা ছাড়াই সমর্থন করছেন। আমরা তাদেরকে তাদের ভুলের জন্য তওবা করতে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের মত পরিবর্তনের আহ্বান জানাই।
দুর্ভাগ্যবশত কিছু খ্রিস্টান নেতাদের কর্মকাণ্ড এবং তাদের দ্বিমুখী আচরণ খ্রিস্টান ধর্মকে ব্যাপকভাবে এক রকম দাসে পরিণত করেছে।
ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের হত্যার মুখে অনেক গির্জার নেতা এবং ধর্মতাত্ত্বিকদের নীরবতায় আমরা দুঃখিত। আমরা আরও হতবাক হয়েছি যে কিছু পশ্চিমা খ্রিস্টান ফিলিস্তিনে ইসরাইলের চলমান দখলদারিত্বের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে দখলদারিত্বের সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের নির্বিচারে হামলাকে কিছু খ্রিস্টান নেতা এবং ধর্মীয় নেতা কর্তৃক বৈধতা দেওয়ায় আমরা আরো বেশি শঙ্কিত।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার কৌশল ব্যবহার করছে। যেমন সাদা ফসফরাস ব্যবহার করে পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কেটে ফেলা এবং আল আহলি অ্যাংলিকান-ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ভয়াবহ গণহত্যাসহ স্কুল, হাসপাতাল এবং উপাসনালয়ে বোমা হামলা এবং সেন্ট পোরফিরিওস গ্রীক অর্থোডক্স চার্চে বোমা হামলা যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান পরিবারগুলোকে ধ্বংস করেছে।
অন্যদিকে আমরা এই যুদ্ধ শুরুর প্রকৃত প্রেক্ষাপট এবং এর মূল কারণকে উপ এমন অদূরদর্শী এবং বিকৃত খ্রিস্টান অবস্থানগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরাইলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উপর জাতিগত নিধন এবং তাদের উপর নৃশংস ও বর্ণবাদী সামরিক দখলদারিত্বের বিষয়ে যারা এখনো চুপ রয়েছে তাদেরকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
গত ১৭ বছর ধরে গাজায় ইসরাইলের নির্মম অবরোধ ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে। ইসরাইলের তীব্র চাপের মধ্যে গাজায় নৃশংস এবং নিপীড়নমূলক জীবনযাপনের পরিস্থিতি কিছু ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে দমনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদেরকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
যাইহোক আমরা ন্যায্য যুদ্ধ তত্ত্বের পশ্চিমা খ্রিস্টান উত্তরাধিকার সম্পর্কে সচেতন যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে নিরীহ বেসামরিক লোকদের উপর পারমাণবিক বোমা ফেলার ন্যায্যতা দিতে ব্যবহৃত হয়েছিল, ইরাকে শেষ মার্কিন যুদ্ধে ইরাক এবং এর খ্রিস্টান জনসংখ্যার ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ইসরাইরের জন্য কোনো শর্তহীন সমর্থন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং "আত্মরক্ষার" নামে ব্যবহার করা হয়েছে।
দুর্ভাগ্যবশত, আমরা যে অহিংস ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিছু পশ্চিমা খ্রিস্টান নেতা ইসরাইলি বর্ণবাদের আলোচনা নিষিদ্ধ করেছে। যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে অনেকবার প্রতিবেদন ছেপেছে এবং তা নিশ্চিত করেছে। কিছু খ্রিস্টান ইহুদিবাদী ঐতিহ্যকে গ্রহণ করেছে এবং কিছু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত যা আমরা আজ অনেক পশ্চিমা দেশ এবং মিডিয়াতে দেখতে পাচ্ছি।
আমরা দৃঢ়ভাবে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করছি। আমরা নিজেদেরকে এবং আমাদেরসহ খ্রিস্টানদেরও মনে করিয়ে দিচ্ছি যে ঈশ্বর নিপীড়িত ও অসহায়দের ঈশ্বর এবং ঈসা (আ) ক্ষমতাশালীদের তিরস্কার করেছিলেন এবং নিপীড়িতদের উপরে স্থান দিয়েছিলেন।
পার্সটুডে/এমবিএ/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।