ইসরাইল কি লেবাননের হিজবুল্লাহর ফাঁদে পড়ছে?
(last modified Sat, 15 Jun 2024 12:38:29 GMT )
জুন ১৫, ২০২৪ ১৮:৩৮ Asia/Dhaka
  • ইসরাইল কি লেবাননের হিজবুল্লাহর ফাঁদে পড়ছে?
    ইসরাইল কি লেবাননের হিজবুল্লাহর ফাঁদে পড়ছে?

পার্সটুডে-দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা নিয়ে মিডিয়াগুলোতে যখন রাজনৈতিক গুঞ্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতি সম্পর্কেও জল্পনা তীব্রতর হয়েছে।

লেবাননে হিজবুল্লাহ সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য ছিল দখলদার ইহুদিবাদী বাহিনীকে লেবানন থেকে বিতাড়িত করা এবং ইসরাইলকে আবারও লেবাননে আগ্রাসন চালানো থেকে বিরত রাখা। মেহর নিউজ এজেন্সি সম্প্রতি একটি নিবন্ধে হিজবুল্লাহর মোকাবেলায় ইসরাইলের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা পার্সটুডের এই প্রতিবেদনে সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয় যখন হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে ২০০০ এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধগুলো ইহুদিবাদী বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল। বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ওই ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়।

আল-আকসা তুফান অভিযানের পর বিশেষজ্ঞ মহল ১৭ বছর পর আবারও হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

আমেরিকা, ফ্রান্স এবং কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে উত্তেজনার লেলিহান শিখা নতুন স্তরে পৌঁছেছে। যে কোনও সময় ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

লেবাননের হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা

হিজবুল্লাহর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই আন্দোলনের বাহিনীর সংখ্যা এক লাখের মতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য কিছু পশ্চিমা উত্স এই সংখ্যাটিকে ৫০ হাজার বলে ঘোষণা করেছে। (৩০ হাজার সক্রিয় বাহিনী এবং ২০ হাজার রিজার্ভ ফোর্স)

স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে লেবাননের হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ১ লাখ ছুঁয়েছে। আবার কিছু সূত্র এই সংখ্যাটি দেড় লাখ থেকে ২ লাখ বলে জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন হাইফা বন্দরের অ্যামোনিয়ার ভাণ্ডারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে হিজবুল্লাহর আরেকটি কৌশলগত অস্ত্র হল ড্রোন। এসব ড্রোন দিয়ে আয়রন ডোমকে ব্যস্ত রেখে সরাসরি ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

গত কয়েকদিনে হিজবুল্লাহ "ডায়মন্ড" ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের আয়রন ডোম সিস্টেমকে যেভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে তার ছবি প্রকাশ পেয়েছে। সেইসব ছবি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর জন্য প্রতিরোধ শক্তির সর্বশেষ বিস্ময়।

অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক এবং অ্যান্টি-শিপ মিসাইলগুলিও হিজবুল্লাহর সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধে ইহুদিবাদীদের আরেকটি দুঃস্বপ্ন-যা ৩৩ দিনের যুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে হিজবুল্লাহর সুড়ঙ্গ ও টানেল নেটওয়ার্কও রয়েছে। যুদ্ধের সময় বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে এগুলো ইসরাইলকে চমকে দিতে পারে। এইসব গোপন সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে হিজবুল্লাহ বাহিনী ইসরাইলি ট্যাঙ্ক, স্নাইপার, অ্যান্টি-আরমার মিসাইল এবং হালকা ড্রোনসহ সাঁজোয়া বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারবে। এমনকি এই গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসরাইলের গভীরেও হিজবুল্লাহ বাহিনী অনুপ্রবেশ করতে পারবে। উত্তর ফ্রন্টের প্রাকৃতিক পরিবেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে হিজবুল্লাহ ১৭ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরভাবে ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।

৭ই অক্টোবরের ঘটনার ধারাবাহিকতায় ইসরাইল উত্তর সীমান্তে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে এবং উত্তর সীমান্তে হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে কূটনৈতিক আলোচনার ওপর নির্ভর না করে সর্বাত্মক যুদ্ধের বিকল্প বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন নেতানিয়াহু লেবাননে হামলার ঝুঁকি গ্রহণ করবে নাকি উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের নীতি বেছে নিতে পছন্দ করবে সেটাই দেখার বিষয়।#

পার্সটুডে/এনএম/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।