আমেরিকায় ইহুদিবাদী লবির প্রভাব ও পশ্চিম এশিয়ায় সভ্যতা-ধর্মীয় সংঘাত
(last modified Thu, 25 Jul 2024 03:38:43 GMT )
জুলাই ২৫, ২০২৪ ০৯:৩৮ Asia/Dhaka
  • আমেরিকায় ইহুদিবাদী লবির প্রভাব ও পশ্চিম এশিয়ায় সভ্যতা-ধর্মীয় সংঘাত
    আমেরিকায় ইহুদিবাদী লবির প্রভাব ও পশ্চিম এশিয়ায় সভ্যতা-ধর্মীয় সংঘাত

পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরাইল গত প্রায় আট দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যা ও দমন অভিযান চালিয়ে আসছে। আর তাদের এই দমন অভিযান সম্ভব হয়েছে আমেরিকা নামক সাম্রাজ্যবাদী দেশের পূর্ণাঙ্গ সমর্থনের কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎপর ইহুদিবাদী লবির চাপের মুখে মার্কিন সরকার ইসরাইলের সকল অপরাধযজ্ঞের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছে।

মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ইহুদিবাদী লবিগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনস্বীকার্য। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই লবিগুলো কোনো গোপন ও আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন বা কোনো নীরব ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী নয়। বরং বেশ কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের সমন্বয়ে এরা ঘোষণা দিয়ে ইসরাইলের পক্ষ অবলম্বনে মার্কিন সরকারকে বাধ্য করে। পার্সটুডের আজকের এ আয়োজনে এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য তুলে ধরা যাক:

দু’টি বৃহৎ লবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলপন্থি বহু লবি সক্রিয় রয়েছে যেগুলোর মধ্যে ‘আইপ্যাক’ ও ‘জি স্ট্রিট’ এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনের প্রার্থীদের নিজের দিকে ভেড়াতে ব্যাপক চেষ্টা করে আইপ্যাক।  ইসরাইলের পক্ষে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে আইপ্যাক দুহাতে পয়সা খরচ করে। পুঁজি আকারে এই বিনিয়োগ অবশ্য পরে কয়েক গুণ লাভ হয়ে আইপ্যাকের ঘরে ফিরে আসে। আল-জাযিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলপন্থি লবিগুলো নির্বাচনের আগে যদি এক ডলার খরচ করে থাকে, তাহলে নির্বাচনের পর তেল আবিব আমেরিকার কাছ থেকে ৫০ ডলার গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে আইপ্যাক এক ডলার বিনিয়োগ করে ইসরাইলের জন্য ৫০ ডলার লাভ ঘরে তোলে। বিনিয়োগের পরিমাণটি যদি ১০০ বিলিয়ন ডলার হয় তাহলে নির্বাচনের পর ইসরাইল পায় ৫,০০০ বিলিয়ন বা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

এদিকে জি স্ট্রিট নামক লবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের নেতাদের মধ্যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কাজে লিপ্ত রয়েছে। এই লবির প্রথম ও প্রধান কাজ ইসরাইল সরকার ও ইহুদিবাদীদের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন আদায় করা। এই কাজ করতে গিয়ে এই গোষ্ঠী অনেক সম,য় ইসরাইলের সমালোচনা করতেও দ্বিধা করে না। তারা দৃশ্যত ইসরাইলের সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাট দলের দোদুল্যমান নেতাদের সমর্থন আদায় করে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও গাজা যুদ্ধ

গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যা চলমান থাকা অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। আমেরিকার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে গাজায় ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও অন্তত ৯০ হাজার ফিলিস্তিনিকে আহত করেছে দখলদার ইসরাইল। অর্থনৈতিক মন্দা ও নানা ধরনের সামাজিক সমস্যাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অসংখ্য সংকট বিদ্যমান থাকলেও দেশটিতে নির্বাচন এলেই একটি বিষয়ে প্রধান দুই দল অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলই ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ঘোষণার ক্ষেত্রে একাট্টা হয়ে যায়। চলমান নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইসরাইলের প্রতি সমর্থন বিশেষ করে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন নির্বাচনে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে।

এ বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের বড় ধরনের প্রভাব বিস্তারের সফলতা ফুটিয়ে তোলে। সেই শীতল যুদ্ধের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তারা আমেরিকার সমর্থন আদায় করতে এবং মার্কিন সরকারের গাঁটের পয়সায় সমরাস্ত্র কিনে শক্তিশালী হতে সক্ষম হয়েছে।  

সভ্যতার সংঘাত ও শেষ জামানার যুদ্ধ

আমেরিকায় একটি কথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর সেটি হচ্ছে, মার্কিন রাজনীতিবিদরা ইসরাইলকে পশ্চিমা সভ্যতার ‘পূর্বতম প্রান্ত’ মনে করেন। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ওয়াশিংটনের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি ‘প্রাচ্য সভ্যতা’ যেন ইসরাইলকে অতিক্রম করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম, হিন্দু ও কনফুসিয়াসীয় সভ্যতা ঠেকিয়ে রাখার প্রথম ফ্রন্ট হচ্ছে জেরুজালেম আল-কুদস। এ কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন তার ইসরাইলি সমকক্ষ আইজ্যাক হার্জগের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন যে, ‘ইসরাইল না থাকলে আমরা তাকে সৃষ্টি করে নিতাম’ তখন এ বক্তব্যের অর্থ উপলব্ধি করতে মোটেও অসুবিধা হয় না।

মুসলমানরা যেমন বিশ্বাস করে হযরত ঈসা (আ.) মারা যাননি বরং শেষ জামানায় তিনি শেষ নবীর (সা.) উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করবেন তেমনি বহু খ্রিস্টান একথা বিশ্বাস করেন যে, ঈসা মাসিহ একদিন আবার ভূপৃষ্ঠে আগমন করবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ থেকে ৮ কোটি খ্রিস্টান মনে করেন, মাসিহ এমন সময় ভূপৃষ্ঠে আগমন করবেন যখন পশ্চিম এশিয়ায় ইহুদিবাদীরা কিছু কাণ্ড-কারখানা ঘটাবে। যারা এই মতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইভানজেলিস্ট বলা হয়। তাদের বিশ্বাস, পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইলের সঙ্গে তার প্রতিবেশী আরব ও মুসলমানদের একটি বিশাল যুদ্ধ সংঘটিত হবে। ওই যুদ্ধে আল-আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্যা রক ধ্বংস হবে এবং তার ভিত্তিভূমিতে ডোম অব দ্যা সলোমান নির্মাণ করা হবে। আর তখনই শেষ জামানার যুদ্ধ শুরু হবে এবং মাসিহ আবির্ভূত হবেন; এই মতাদর্শে বিশ্বাসীদের দৃষ্টিতে তাই ফিলিস্তিনের ওপর ইহুদিবাদীদের দখলদারিত্ব বৈধ।

উপনিবেশবাদী খেলা, ইসরাইল সৃষ্টি ও পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের প্রতি চ্যালেঞ্জ

ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্র এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শক্তির প্রত্যক্ষ মদদে ১৯১৭ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয এবং ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রাষ্ট্রের কার্যকলাপ শুরু হয়ে যায়। তখন থেকে গোটা ফিলিস্তিন জবরদখল করার লক্ষ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মূল মালিকদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীরা অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছে।

এদিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে বিশ্বের বহু দেশ মনে করছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটির ধ্বংস হয়ে যাওয়া উচিত এবং এই রাষ্ট্রে বসবাসকারী ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যাওয়া উচিত।

আজকের এ আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো জানা থাকলে যেকোনো পাঠকের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া আল-আকসা তুফান অভিযানের স্বরূপ উপলব্ধি করা কঠিন কোনো কাজ হবে না।#

পার্সটুডে/এমএমআই/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

 

 

ট্যাগ