নারীর বিরুদ্ধে; ফিলিস্তিনে নারীদের হত্যা, আমেরিকা ও ইউরোপে সামাজিক সহিংসতা
(last modified Tue, 26 Nov 2024 14:00:43 GMT )
নভেম্বর ২৬, ২০২৪ ২০:০০ Asia/Dhaka
  • নারীর বিরুদ্ধে; ফিলিস্তিনে নারীদের হত্যা,  আমেরিকা ও ইউরোপে সামাজিক সহিংসতা

২৫ নভেম্বরকে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে নামকরণ করা হয়। যদিও কিছু সমাজে নারীরা এখনও চরম নিপীড়ন এবং ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছে বিশেষ করে গাজার মতো যুদ্ধক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি খুবই গুরুতর আকার ধারন করেছে।

এই বছর এবং এই সপ্তাহে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবসটি এমন সময় পালন করা হচ্ছে যখন নারীদের অধিকারকে সম্মান করার বিষয়ে কয়েক দশক ধরে স্লোগান দেওয়ার পরেও, তারা এখনও বিশ্বের ভূগোলের একটি অংশে ন্যূনতম আইনি অধিকার এবং এমনকি জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হচ্ছে। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী এই বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স চ্যানেলে লিখেছেন, 'নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিষিদ্ধের আন্তর্জাতিক দিবসে আসুন আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনে কয়েক দশকের নৃশংস দখলদারিত্ব এবং ঔপনিবেশিক গণহত্যার কারণে সৃষ্ট গুরুতর সহিংসতার কথা স্মরণ করি।'

বাকাই গাজায় নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা ও এর ভয়াবহতাকে নজিরবিহীন এবং মর্মান্তিক বলে বর্ণনা করে বলেন, 'গত এক বছরে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি নারী ও মেয়ে নিহত বা আহত হয়েছে এবং সমস্ত মা, নারী ও মেয়েরা  গাজায় অনাহার এবং প্রায়শই বাধ্যতামূলক অভিবাসনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।'

গাজা যুদ্ধের এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও অধিকৃত ফিলিস্তিনে নারী ও শিশুদের অবস্থা নাজুক। নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘের প্রতিবেদক রিম আল-সালেম একটি প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলেছেন, 'গাজার ফিলিস্তিনিদের অবস্থা এবং গাজায় বিদ্যমান বেদনা, দুর্ভোগ ও সন্ত্রাস বর্ণনা করার জন্য অনেক মাঠকর্মী সঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। ইসরাইল গাজায় নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করে বেপরোয়া হামলা চালাচ্ছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। তারা যুদ্ধাপরাধের শিকার কারণ তারা ফিলিস্তিনি এবং নারী।'

গাজার নারীরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের অনেকেই তাদের স্বামী ও সন্তানদের হারিয়েছেন। অনেকে অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং এমনকি তাদের জন্য মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গাজার গর্ভবতী মহিলারা বোমাবর্ষণ এবং চিকিৎসা পরিষেবার সংকটের মধ্যেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা অমানবিক ও অপমানজনক আচরণের শিকার হচ্ছে।

জাতিসংঘের সাংবাদিকরাও ফিলিস্তিনি নারী ও মেয়েদের প্রতি ইহুদিবাদী ইসরাইলের অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

"আল-জাজিরা" চ্যানেল সম্প্রতি গাজা উপত্যকার আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে অবরুদ্ধ এক ফিলিস্তিনি নাগরিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে ইসরায়েলি বাহিনী এই মেডিকেল কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং তারপর তাদেরকে হত্যা করেছে।

ফিলিস্তিনি নারী ও তাদের শিশুদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক গ্রেফতার এবং পশ্চিম তীর ও অধিকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদেরকে আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করার বিষয়ে বিশ্বস্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নারীর প্রতি সহিংসতা

আফগানিস্তানের মতো অন্যান্য দেশেও নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। আফগান নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নেটওয়ার্কের প্রধান তারনাম সাইদি বলেছেন, এই বছর আফগান নারীরা ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, সামাজিক অবমাননা এবং নিয়মতান্ত্রিক অবিচারের মুখোমুখি হয়ে ২৫ নভেম্বর উদযাপন করছে।

ইউরোপ-আমেরিকায় নারীরাও সহিংসতা ও নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং এর ফলে কয়েকদিন আগে ফ্রান্স ও ইতালিতে অনেক নারী প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

রোম, প্যারিস, মার্সেই এবং লিলি শহরে বিক্ষোভকারীরা যৌন, শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিকসহ মহিলাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমেরিকাতে মহিলা এবং মেয়েরা বিশেষ করে অভিবাসী এবং কালো রঙের লোকেরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেখা যায় যে আমেরিকায় গড়ে প্রতি তিনজন নারীর একজন পারিবারিক সহিংসতার শিকার। একই সময়ে,প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন নারী তার জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

অতএব, নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এখনও বিশ্বের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে ব্যাপক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার অভাব সেইসাথে এই সহিংসতার ব্যাপারে দায়মুক্তি এই প্রক্রিয়াটিকে অব্যাহত রাখার পেছনে প্রধান কারণ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।