খাদ্য সরবরাহ নাকি মৃত্যু ফাঁদ? ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের হত্যায় ইসরাইলি কৌশলের বিবরণ
(last modified Thu, 28 Nov 2024 08:40:20 GMT )
নভেম্বর ২৮, ২০২৪ ১৪:৪০ Asia/Dhaka
  • খাদ্য সরবরাহ নাকি মৃত্যু ফাঁদ? ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের হত্যায় ইসরাইলি কৌশলের বিবরণ

ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকার যখনই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে খাদ্য ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে তখনই এটি সাধারণত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত করেছে। এমন একটি ঘটনার উদাহরণ হচ্ছে ২০২৪ সালে আল রশীদ সড়কে ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালের অক্টোবরে এবং ইসরাইলি সরকারের বিধিনিষেধের কারণে জাতিসংঘ গাজার চাহিদার ৩০ শতাংশেরও কম খাদ্য সরবরাহ করতে পেরেছিল। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী  উত্তর গাজায় খাদ্য ও পানি বন্ধের ৪০ দিনের পরিপূর্ণ অবরোধের পর যখন তেল আবিব সরকারকে ইসরাইলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছি তখন তিনটি ত্রানবাহী ট্রাক বেইত হানুনে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু যখন ত্রাণগুলো বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল ইজরাইলি বাহিনী জনতার উপর গুলি চালায় এবং ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর অন্যান্যগুলো ট্রাক জাবালিয়া এবং বেইত লাহিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানেও ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং এই অঞ্চলের শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য ঘাস খেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

মে মাস থেকে ইসরাইলি সরকার গাজায় প্রবেশের জন্য ৩০০টি ট্রাকের মধ্যে ৩০টির  কম অনুমতি দেয়া হয়।  জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ঘোষণা করেছেন যে ইসরাইলি সরকার ৩১টি পরিকল্পিত মানবিক মিশনের মধ্যে ২৭টি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যে চারটি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেগুলো বিতরণে মারাত্মক বাধা দেয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতির ফলাফল ছিল উত্তর গাজায় বেকারি এবং রান্নাঘর বন্ধ, পুষ্টি সহায়তা স্থগিত করা এবং হাসপাতাল এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার জন্য জ্বালানীর অভাব।

যখনই ইসরাইলি সরকার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে খাদ্য ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে তখনই তারা সাধারণত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলিকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে। এমন একটি ঘটনার উদাহরণ হচ্ছে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আল রশীদ সড়কে ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড।  

আগের দিন খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে আটা বহনকারী ট্রাক গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছে। শত শত ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ নির্ধারিত স্থান নাবলুস স্কোয়ারে জড়ো হয়।

পরের দিন ভোর সাড়ে চারটার দিকে দূর থেকে ট্রাকের বাতিগুলো জ্বলতে শুরু করে। ট্রাকের আলোগুলো শীতল সকালের অন্ধকার ভেদ করে উকি দিচ্ছিল। হতাশ জনতার মধ্যে  তখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মহিলারা কাঁদছিল এবং খুশি হয়েছিল যে তাদের বাচ্চারা শীঘ্রই খাবার পাবে। ট্রাকগুলো যতই কাছে আসছিল তাদের আশার আলো আরও উজ্জ্বল হতে থাকল। কারণ এসব ত্রাণবাহী ট্রাকই অপেক্ষামান নারী ও পুরুষের মনে নতুন আশা জাগিয়েছিল।

ট্রাকগুলো আইডিএফ চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে খোলা মাঠে প্রবেশ করেছে। তাদের ইঞ্জিনের গর্জন ভিড়ের মাঝে ক্ষুধার্ত পেটের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। ক্ষুধার্ত নর-নারী সাবধানে যখন ট্রাকের কাছে এলো ঠিক সেই মুহূর্তে গুলির শব্দ ভেঙ্গে দিল শীতল সকালের নীরবতা।

বিক্ষিপ্ত জনসংখ্যা ছিল ইসরাইলি ট্যাঙ্ক এবং স্নাইপারদের লক্ষ্যবস্তু যারা এলাকার চারপাশে ত্রাণ সংগ্রহ করার লক্ষ্যে অবস্থান করেছিল। মুহূর্তের মধ্যে আশা আতঙ্কে পরিণত হল এবং ময়দার বস্তা ক্ষুধার্তদের রক্তে রঞ্জিত হল। কমপক্ষে ১১৮ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ৭৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছিল।

এই ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি সেনারা টানা নবম দিনের মতো খাবারের ট্রাকগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।এপ্রিলে,ইসরাইলি ড্রোনগুলো গ্লোবাল সেন্ট্রাল কিচেনের মালিকানাধীন যানবাহনগুলোতে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, সাতজন সাহায্য কর্মীকে হত্যা করেছিল।

ইসরাইলের গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ধ্বংস করার পরিকল্পিত নীতি ছাড়াও, জাতিসংঘ গাজাকে সাহায্য কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে। ১৯৪৫ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২০২৪ সাল জাতিসংঘ কর্মীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ানক বছর হয়ে উঠেছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ৩২০ জনেরও বেশি মানবিক কর্মী নিহত হয়েছে।

খাদ্য সহায়তা হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ইসরাইলি সরকার স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকেও লক্ষ্যবস্তু করেছিল যারা সাহায্যকারী ট্রাকগুলোতে পাহারা দিত। পুলিশ নিরাপত্তা ব্যতীত ব্যাপক ক্ষুধা, হতাশা এবং বেপরোয়া  সংমিশ্রণে ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থার দ্বারা সংগঠিত ভাড়াটে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বারা ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোতে আক্রমণ এবং লুটপাট করার পথ খুলে দিতে পারে যার ফলে আইন-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটে। এটি সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের বৃহত্তর কৌশলের অংশ।#

 

পার্সটুডে/এমবিএ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।