গাজায় থেমে গেছে 'গিডিয়নের রথ'; ধ্বংসস্তূপের নিচে নতুন প্রতিরোধের জাগরণ
(last modified Mon, 07 Jul 2025 10:47:23 GMT )
জুলাই ০৭, ২০২৫ ১৬:৪৭ Asia/Dhaka
  • গাজার চোরাবালিতে ইসরাইলি বাহিনী
    গাজার চোরাবালিতে ইসরাইলি বাহিনী

পার্স টুডে: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের 'অপারেশন গিডিয়নের রথ' পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ একুশতম মাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে 'গিডিয়নের রথ' অভিযানের ব্যর্থতার লক্ষণগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

পার্স টুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়ে, ইহুদিবাদী ইসরাইল গত ১৬ মে 'কৌশলগত এলাকাগুলো দখল, হামাসকে পরাজিত করা এবং বন্দীদের মুক্ত করা'র লক্ষ্যে 'অপারেশন গিডিয়নের রথ' শুরু করে। তেল আবিব এই অভিযানকে 'ভবিষ্যৎ নির্ধারক' হিসেবে প্রচার করেছিল, কিন্তু সেটিই এখন রাজনৈতিক, সামরিক এবং মানবিকভাবে এক গভীর সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।

মে মাসের শুরুতে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই অভিযানকে সামরিক বিজয়ের অজুহাতে অনুমোদন দেয়। কিন্তু এর প্রকৃত লক্ষ্য ছিল গাজায় চলমান গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতা অব্যাহত রাখা।

সামরিক ব্যর্থতা ও সেনাবাহিনীর হতাশা

হিব্রু ভাষার প্রভাবশালী সংবাদপত্র ইদিওত আহরোনত-এর বিশ্লেষক নাহুম বার্নিয়া এক নিবন্ধে লিখেছেন, গাজায় চালানো সামরিক অভিযান চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে তা স্বীকার না করলেও অভ্যন্তরীণভাবে তারা গভীর মনঃপীড়ায় রয়েছে।

তিনি মনে করেন, এই অভিযান মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত, যার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর বর্তায়। তার কারণেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এর সামরিক বিশ্লেষক আমোস হারেল-এর মতে, নেতানিয়াহু কেবলমাত্র নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে যুদ্ধবন্দি এবং তাদের পরিবারের কষ্ট বেড়েছে, একই সঙ্গে ইসরাইলি সমাজও গভীর সংকটে পড়েছে।

এক জরিপ অনুযায়ী, ৬০ শতাংশের বেশি ইসরাইলি নাগরিক যুদ্ধ বন্ধ ও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের পক্ষে মত দিয়েছে—এমনকি যদি তাতে চড়া মূল্যও দিতে হয়।

গাজার ধ্বংস ও প্রতিরোধের পুনর্জন্ম

হারেৎজ আরেক প্রতিবেদনে বলেছে: “আজকের গাজা এক উর্বর জমিনে পরিণত হয়েছে নতুন ধরনের প্রতিরোধের জন্য। এই প্রতিরোধ শুধুই হামাস বা ইসলামি জিহাদের নয়, বরং স্থানীয়, গেরিলা ও ক্ষুদ্র চৌকস দল যারা হালকা অস্ত্র ও হস্তনির্মিত বোমা ব্যবহার করে দখলদারদের জন্য স্থায়ী হুমকি হয়ে উঠছে।”

এই পরিস্থিতি অনেকটা ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক দখলদারিত্বের ব্যর্থতার মতো, কিংবা ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি বলেই মনে হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর যুদ্ধ শেষ করার আবেদন

জেরুজালেম পোস্ট ইসরাইলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সেনাবাহিনী আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার দাবি জানিয়েছে, কারণ লেবানন ও ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকির পাশাপাশি চলমান সংঘর্ষ সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

ধ্বংসের প্রান্তে দখলদার রাষ্ট্র

ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা এখন নিজেকে একটি অভূতপূর্ব সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে।

সামরিকভাবে: প্রতিরোধ ধ্বংস করতে বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করতে ব্যর্থ।

মানবিকভাবে: হাজারো শহীদ, আহত ও লক্ষাধিক গৃহহীন মানুষের সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়।

রাজনৈতিকভাবে: নেতানিয়াহুর সরকার বৈধতা হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বিভক্তি বাড়ছে।

মাঠপর্যায়ে: গাজা একটি বিস্ফোরক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে নতুন পদ্ধতিতে স্থায়ী প্রতিরোধের বিকাশ ঘটছে।

এসব কারণে ইসরাইলের 'গিডিয়নের রথ' অভিযানের কৌশলগত ব্যর্থতার স্বাক্ষ্য দেয়। যে অভিযান দিয়ে বিজয়ের কথা বলা হয়েছিল, সেটির ধ্বংসস্তূপ এখন তেলআবিবের ওপরই চাপা পড়ে আছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৭