'আল-আকসা তুফান' থেকে ইরানের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধ পর্যন্ত
নেতানিয়াহুর অবস্থান দুর্বল হওয়ার ৩টি মূল কারণ
-
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
পার্সটুডে-এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গত ১৩ জুন ইহুদিবাদী ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করার এক মাস পরও, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লিকুদ পার্টি এখনও সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করতে পারেনি।
আল জাজিরা নেটওয়ার্ক লিখেছে: যদিও এটা দাবি করা যায় না যে ২৪ জুনে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ শেষ হয়েছে, তবে মনে হচ্ছে এই যুদ্ধ দখলদার ইসরাইলের শাসনকাজ এবং ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির প্রধানমন্ত্রী "বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু"-র জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়নি।
আল আলম নেটওয়ার্কের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পর, জরিপে দেখা গেছে যে নেতানিয়াহুর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেতানিয়াহুর এই নড়বড়ে অবস্থানের মূল কারণ তিনটি:
এক- ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর ঘটনায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যর্থতা
দুই- ওই ঘটনায় নেতানিয়াহু এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের ভূমিকা এবং সেইসাথে ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং
তিন- রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অতি-ডানপন্থীদের আন্দোলন তীব্রতর হওয়া
৭ অক্টোবর, ২০২৩ ইসরায়েলি সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতা
৭ অক্টোবর ২০২৩, হামাসের আল আকসা তুফান অভিযান ঠেকাতে ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থতা, অন্য যেকোনো কারণের চেয়ে নেতানিয়াহু এবং লিকুদ দলের অবস্থানকে বেশি প্রভাবিত করেছিল। এই ব্যর্থতা দুটি নিরাপত্তা এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ছিল। প্রথমটি ছিল শিন বেট এবং সরকারের সামরিক নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার মতো ইসরায়েলের শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর অভিযানের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতা।
দ্বিতীয় ব্যর্থতাটি ছিল হামাস যোদ্ধাদের প্রাথমিক সামরিক অগ্রগতি রোধ করতে ইসরায়েলের অক্ষমতা, যার ফলে গাজা সীমান্তের কাছাকাছি শহরগুলিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী অনুপ্রবেশ করে এবং প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।
তবে, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম সম্পর্কে, নেতানিয়াহু তার প্রশাসনের দায়িদায়িত্ব গ্রহণ করেননি বরং এ ব্যর্থতার দায় তিনি সমস্ত নিরাপত্তা এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেন। এমনকি তিনি এই ঘটনাটিকে পার্ল হারবারে জাপানি আক্রমণের (পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে ইম্পেরিয়াল জাপানি বিমান ও নৌবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ) সাথে তুলনা করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট কি জাপানি আক্রমণের জন্য দায়ী ছিলেন?"
৭ অক্টোবরের অভিযানের ২২ মাস পর গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরানে সামরিক সাফল্য দাবি করে নেতানিয়াহু তার ব্যর্থতা ঢাকতে চেয়েছিলেন; কিন্তু ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতা ইসরায়েলি রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ তার ব্যর্থতার বোঝা কমাতে সক্ষম হয়নি।
ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা
ইরানের উপর সাম্প্রতিক আক্রমণে, ইসরায়েল কিছু সাফল্য অর্জনের দাবি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আকাশপথে শ্রেষ্ঠত্ব সুসংহত করা, কিন্তু "ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা," "ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা দুর্বল করা" এবং "ইরানের সরকারের ব্যবস্থার পরিবর্তন" এর মতো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অতি-ডানপন্থীদের আন্দোলন তীব্রতর হওয়া
অন্যদিকে, রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক গঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। "ইয়াহুদুত তোহরার" এর মতো অর্থোডক্স ধর্মীয় দলগুলির সাথে মতবিরোধের কারণে এই দলটি মন্ত্রিসভা ত্যাগ করেছে এবং ধর্মীয় দল "শাস" এর উপস্থিতিও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, "বেন গুয়ের" বা "স্মোট্রিচ", দুটি দলের মধ্যে যেকোনোএকটির সমর্থন প্রত্যাহার মন্ত্রিসভার পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ধারাবাহিক পরাজয়ের ছায়া, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের পরাজয়ের বোঝা নেতানিয়াহুর উপর এখনও ঝুলছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তারা পিছনে। #
পার্সটুডে/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।