ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি: কেন গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হওয়া যায় না?
-
ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি: কেন গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হওয়া যায় না?
পার্সটুডে- দখলদার ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অমান্য করে বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ায় শান্তির সম্ভাবনা অনিশ্চয়তার আবরণে ঢেকে গেছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলি শাসনযন্ত্র তথাকথিত “ট্রাম্প পরিকল্পনা”কে নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। পার্সটুডে'রপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “গাজাকে একটি স্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ ‘অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল’-এ পরিণত করতে হবে।”
অজুহাতের রাজনীতি: শান্তি নষ্টের ইসরায়েলি কৌশল
গাজা যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের অন্যতম বড় বাধা হলো ইসরায়েলের বারবার অজুহাত দেখানো—বিশেষ করে ইসরায়েলি বন্দিদের মৃতদেহ ফেরত দেওয়া ইস্যুতে। তথাকথিত ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী, হামাসকে ২০২৫ সালের ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ২৮ জন মৃত বন্দির দেহ ফেরত দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৯টি মরদেহ হস্তান্তর হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহগুলো খুঁজে বের করতে বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন, কিন্তু ইসরায়েল এটিকে “প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন” বলে দাবি করছে এবং সেই অজুহাতে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
নেতানিয়াহু এ জন্য নানা অজুহাত তুলে ধরলেও বাস্তবে এটি চুক্তির লঙ্ঘন। এর ফলে গাজার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসরায়েলের অজুহাতের পর হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল কখনও ভুল মরদেহ পাঠাচ্ছে, কখনও আবার হাত-বাঁধা অবস্থায় নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশ ফেরত দিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
ইসরায়েলের এই “অজুহাতনীতি” মূলত তাদের আলোচনায় প্রভাব বজায় রাখার কৌশল এবং আসলেই আস্থা গঠনের কোনো সদিচ্ছা নেই। একদিকে তেলআবিবে ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারগুলো প্রতিবাদ করছে, অন্যদিকে গাজার জনগণ মারাত্মক মানবিক সংকটে ভুগছে। এই দ্বৈত বাস্তবতা যুদ্ধবিরতিকে এক রাজনৈতিক খেলায় পরিণত করেছে, যা টেকসই শান্তির আশাকে আরও ক্ষীণ করে তুলছে।
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না
ট্রাম্প পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের মূল লক্ষ্য হলো হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ। আর এই উদ্দেশ্যই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প হামাসের সামরিক অবকাঠামো, বিশেষকরে টানেল নেটওয়ার্ক ও অস্ত্রভাণ্ডার সম্পূর্ণ ধ্বংসের ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে হামাস এটিকে “প্রতিরোধের আদর্শ ধ্বংসের প্রচেষ্টা” হিসেবে দেখছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষক হিউ লাওয়াত সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধের সময় হাজারো নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছে হামাসে। এই সংগঠন কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা ছাড়া নিরস্ত্রীকরণ মেনে নেবে না। অন্যদিকে, গাজায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষে হামাসের পাল্টা সামরিক অভিযান প্রমাণ করেছে, সংগঠনটি এখনও নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যা নিরস্ত্রীকরণের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এই চ্যালেঞ্জ কেবল সামরিক নয়, রাজনৈতিকও বটে।#
পার্সটুডে/এসএ/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।