ভাবমূর্তি উদ্ধারে মরিয়া ইসরায়েল: ৭৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনতে চায় বিশ্বের বিবেক
-
৭৫০ মিলিয়ন ডলারে কি কেনা যায় বিশ্বের বিবেক?
পার্সটুডে: গাজায় গণহত্যার কারণে বিশ্বব্যাপী তীব্র ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট নির্ধারণ করেছে।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের কারণে বিশ্বের জনমত ইসরায়েলি রেজিমের প্রকৃত চেহারা ও চরিত্র সম্পর্কে আরও পরিচিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এই শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন থেকে বিরত রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামেও এর বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। বহু সরকার ও সাধারণ মানুষ গাজায় ব্যাপক হামলা ও বেসামরিক হতাহতের জন্য ইসরায়েলকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচনা করে। ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঢেউ তৈরি হয়েছে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও নাগরিক প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছে। এর ফলে, ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠী গুরুতর বৈশ্বিক বৈধতা সংকটে পড়েছে। এছাড়া, শাসকগোষ্ঠীর নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে দখলকৃত ফিলিস্তিনকে পর্যটন ও বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেখার প্রবণতা কমে গেছে।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈশ্বিক ক্ষোভ ও তাদের অত্যন্ত নেতিবাচক ভাবমূর্তির বিষয়ে সচেতন। তাই তারা বিপুল ব্যয় করে নতুন এক পরিকল্পনায় এই নেতিবাচক ধারণা দূর করতে ও নিজেদের পছন্দের বয়ান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা'আর সম্মত হয়েছেন যে, ২০২৬ সালের বাজেট থেকে ২.৩৫ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার) বিশ্বব্যাপী বৃহৎ প্রচার ও প্রভাব বিস্তারের ক্যাম্পেইনের জন্য বরাদ্দ করা হবে। মন্ত্রিসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বাজেট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ এবং নির্বাচিত কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলকৃত ভূখণ্ডে ভ্রমণ করানোর কাজে ব্যয় করা হবে।
এই বাজেটের একটি অংশ ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রচার কার্যক্রমে ব্যয় হবে। ইউরোপজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী ও ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইনফ্লুয়েন্সার ও অনলাইন সক্রিয় কর্মীরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইসরায়েলের পছন্দসই বর্ণনা প্রচার করছে। লক্ষণীয় যে, এই প্রচারের মূল লক্ষ্য অধিকৃত ভূখণ্ডকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থল হিসেবে উপস্থাপন করা। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, যদি অধিকৃত অঞ্চলে আবার পর্যটন বাড়ানো যায়, তাহলে তাদের ভাবমূর্তিও উন্নত হবে।
একই সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গাজা সংকট সংক্রান্ত প্রতিবেদনকে অবমূল্যায়ন করাও এ ক্যাম্পেইনের অংশ। অর্থাৎ এসব প্রচারের একটি অংশ সরাসরি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মানবিক সংকট সম্পর্কিত প্রতিবেদনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তাই ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার পরিকল্পনা যেমন ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরতে চায়, তেমনি গাজার মানবিক বিপর্যয়ের সত্যিকারের চিত্রকেও অস্বীকার ও দুর্বল করার চেষ্টা করে।
এই পদ্ধতি প্রমাণ করছে যে, তেল আবিব রাজনৈতিক বা সামরিক আচরণ পরিবর্তনের চেয়ে প্রচার ও জনসংযোগের মাধ্যমে বিশ্বজনমতের ধারণা বদলাতেই বেশি আগ্রহী। যদিও অধিকৃত ভূখণ্ডের অভ্যন্তরেও বহু মানুষ মনে করেন, এমন উদ্যোগ ইসরায়েলের গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বৈশ্বিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে খুব একটা সহায়ক হবে না, কারণ এই শাসন অভূতপূর্ব মাত্রার বৈশ্বিক ঘৃণা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/৮