পবিত্র মক্কা নগরীকে বাণিজ্য এবং ভোগ বিলাসের কেন্দ্রে পরিণত করা হচ্ছে
(last modified Fri, 16 Sep 2016 16:08:56 GMT )
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬ ২২:০৮ Asia/Dhaka
  • পবিত্র মক্কা নগরীকে বাণিজ্য এবং ভোগ বিলাসের কেন্দ্রে পরিণত করা হচ্ছে

পবিত্র মক্কা নগরীর অধিবাসীরা সরকারি মদদপুষ্ট ভূমি দস্যুদের অসহায় শিকার হচ্ছেন। নগরীর ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলা হচ্ছে। ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে ওঁৎপ্রোতভাবে জড়িত ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কথিত উন্নয়নের নামে হজরত খাদিজাতুল কোবরার বাসস্থানকে গণশৌচাগারে পরিণত করা হয়েছে।

সৌদি আরবের ওয়াহাবি শাসক ও ধর্মীয় নেতাদের মদদপুষ্ট রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীরা পবিত্র মক্কা নগরীর পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কথিত উন্নয়নের নামে এ পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করাকে খোদ মক্কাবাসীরাই মেনে নিতে পারছেন না।

পবিত্র কাবা ঘরের কাছেই নির্মাণ করা হয়েছে আরাজ আল-বাইত ক্লকটাওয়ার। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চ এ স্থাপনায় বিলাসবহুল হোটেল এবং পাঁচতলা বিপণন কেন্দ্র রয়েছে। ১,৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ে গতবছর এ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এটি পবিত্র কাবা ঘরের ওপর মুনাফাবাজীর কুৎসিত ছায়া বিস্তার করেছে। কাবার সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। এখানেই আগামী বছর চালু হবে বিশ্বের বৃহত্তম হোটেল আবরাজ কুদাই।

ক্লকটাওয়ার নির্মাণের সময় মুসলিম বিশ্ব থেকে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু তাকে পাত্তা দেয় নি সৌদি শাসক। ক্লকটাওয়ার নির্মাণ পরিকল্পনাকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দাবি করেছিলেন সৌদির তৎকালীন ইসলাম বিষয়কমন্ত্রী।

কথিত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন কর্মসূচিতে পবিত্র কাবার ভাব-গাম্ভীর্যের প্রতি সামান্যতম ভ্রুক্ষেপও করা হয় নি। মহানবী এবং ইসলামের জন্মভূমি এ নগরীর দিগন্ত ঢেকে দিয়েছে বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত ক্রেনের বহর। পবিত্র এ নগরীর আদি বাসিন্দাদের সংখ্যা ২০ লাখ হবে এবং তারা অনেকেই কথিত উন্নয়নের ধাক্কার সঙ্গে তাল রাখতে পারছেন না। তাদেরকে মক্কা ছেড়ে আশপাশের গ্রামে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

সৌদি শাসকগোষ্ঠীর ঔদ্ধত্য এতই বেড়েছে যে হজরত খাদিজাতুল কোবরার পুণ্যগৃহ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে গণশৌচাগার। এ ছাড়া, হোটেল এবং বাণিজ্য কেন্দ্র তৈরির লালসায় পবিত্র মক্কার পুরানো ৩০টি মহল্লার মধ্যে ১৫টি এরইমধ্যে গু‌ঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে ইসলামি ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত হাজার হাজার স্থান। এদিকে, পবিত্র নগরীর অনেক অধিবাসীকেই একাধিকবার ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয়েছে। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তেল রাজস্ব কমে যাওয়ার সাথে সাথেই পবিত্র হজকে আয়ের প্রধান উৎস করতে চাইছে সৌদি আরব। মক্কার কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ পবিত্র কাবা ও তার আশপাশের এলাকাকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র করে তোলা হচ্ছে। ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোর সংঘবদ্ধ তৎপরতার মুখে অসহায় হয়ে পড়ছে পবিত্র মক্কা নগরীর স্থায়ী মানুষগুলো। ওই এলাকার বাসিন্দাদের নগরীর প্রান্তসীমায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ২০১১ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এসব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গেটে সরিয়ে নেয়া হবে। সেখানে ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সস্তায় হাউজিং কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে ঘটছে অন্যরকম। কোনো মক্কাবাসীর ঘরবাড়ি একবার অধিগ্রহণ করা হলে তাকে নামমাত্র অর্থ দেয়া হয়। তবে সবাই এ অর্থ পায় না। ফলে ছিন্নমূল মক্কাবাসীরা আশপাশের গ্রামগুলোতে চলে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে বসবাস করতে থাকেন তারা।

ইসলাম ও ঐতিহ্যের প্রতি সামান্যতম পরোয়া না করে উন্নয়নের নামে এভাবে নগর নির্মাণের কঠোর সমালোচনা করেন সৌদি স্থপতি সামি আংগাভি। তিনি বলেন, পবিত্র নগরীকে ওরা প্রাণহীন যন্ত্র বানিয়ে ফেলছে। নগরীর কোনো পরিচয় আর থাকবে না। ঐতিহ্য থাকবে না। সংস্কৃতি থাকবে না। উন্নয়ন তৎপরতা চালাতে গিয়ে ওরা মক্কার পাহাড়গুলো পর্যন্ত কেটে ফেলছে। এমনকি প্রাকৃতিক পরিবেশ বলেও মক্কায় আর কিছু থাকবে না বলে  মন্তব্য করেন তিনি।

'প্রাকৃতিক পরিবেশ বলেও মক্কায় আর কিছুই থাকবে না'

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণের কাজ দিনরাত চলছে। পবিত্র মক্কা পরিশুদ্ধ আত্মিক নগরী না হয়ে শেষপর্যন্ত বাণিজ্য এবং ভোগ বিলাসের কেন্দ্র হয়ে উঠছে বলেও আশংকা করছেন অনেকে।# 

পার্সটুডে/মূসা রেজা/১৬

 

ট্যাগ