দেশে-বিদেশে মানবাধিকার হরণে সৌদি স্পর্ধা বৃদ্ধির রহস্য
(last modified Fri, 04 Nov 2016 15:25:23 GMT )
নভেম্বর ০৪, ২০১৬ ২১:২৫ Asia/Dhaka

সৌদি নাগরিকদের ওপর দেশটির রাজতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়ন ও সরকারি উদ্যোগে নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। ফলে বাড়ছে প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া। 

সরকারি জুলুম ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদে সম্প্রতি আরও এক সৌদি মানবাধিকার কর্মী অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। এই মানবাধিকার কর্মীর মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তার কারাদণ্ড অব্যাহত রেখেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ তুলে ধরতে খালিদ আল উমাইর নামের এই মানবাধিকার কর্মী বেছে নিয়েছেন অনশন ধর্মঘটের পথ।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ৮ বছরের দীর্ঘ কারাবাসের পর গত ৫ অক্টোবর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল খালিদের। কিন্তু কারাদণ্ড চলতে থাকায় ৭ অক্টোবর কারাগারেই অনশন শুরু করেন খালিদ। সৌদি নাগরিক খালিদের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে রিয়াদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে তাকে দেয়া হয় ৮ বছরের কারাদণ্ড। 

এদিকে সৌদি দৈনিক রিয়াদ জানিয়েছে, প্রখ্যাত শিয়া মুসলিম ধর্মীয় নেতা শহীদ নিমরের সমর্থক হওয়ার দায়ে কয়েকজন সৌদি নাগরিককে দীর্ঘ মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।   সৌদি সরকারের নানা জুলুম ও বৈষম্যের প্রকাশ্য সমালোচক হিসেবে খ্যাত আলেম শাইখ নিমর বাকির আননিমরকে চলতি বছরের শুরুতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি সরকার তাকে উৎখাতের কথিত ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অজুহাত দেখিয়ে শাইখ নিমিসহ ৪৭ সৌদি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।শাইখ নিমরের প্রাণদণ্ড কার্যকর করার ঘটনায় সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল। 

আইন-বিশারদরা বলছেন, সৌদি সরকার ইসলামী আইন ও ন্যায়বিচার উপেক্ষা করে অধিকার-আন্দোলনে জড়িত সৌদি নাগরিকদেরকে প্রাণদণ্ড ও কারাদণ্ডসহ নানা ধরনের শাস্তি দিচ্ছে।সৌদি সরকার ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে নাগরিকদের সম্ভাব্য প্রতিবাদকে স্তব্ধ করতে চায়। সৌদি আরবে সরকার বিরোধী ত্রিশ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক কর্মীকে বন্দি রাখা হয়েছে। কারাগারে তাদের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ ও নৃশংস নির্যাতন। আর এ থেকেই সৌদি সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে।

 মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে সৌদি জনগণকে সব ধরনের রাজনৈতিক ও বাক-স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রেখেছে রিয়াদের আলে সৌদ শাসকগোষ্ঠী। অন্যদিকে বাহরাইন ও ইয়েমেনে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ এবং লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়ার নীতি বজায় রেখেছে সৌদ শাসকগোষ্ঠী। তারা এসবই করছে মুসলিম বিশ্বে পাশ্চাত্যের বিভেদকামী নীতির সহযোগী হিসেবে।

তাই সৌদি শাসকগোষ্ঠী বলতেই এখন বিশ্ব-জনমতের সামনে ভেসে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে গণতন্ত্রহীন, ষড়যন্ত্র-পরায়ন ও নৃশংস দমন-পীড়ক এক সরকারের ছবি। আর এতোসব কুকীর্তি সত্ত্বেও সম্প্রতি ব্রিটিশ ও মার্কিন প্রভুর আশীর্বাদে সৌদি সরকার আবারও জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হয়েছে। এর আগে দেশটি এই পরিষদের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি  কিছু সময়ের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞদের প্রধান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিল। মূলত পশ্চিমা প্রভুদের আশীর্বাদ ও পেট্রো-ডলারের খুঁটির জোরেই সৌদি সরকার দেশে-বিদেশে ব্যাপক মাত্রায় মানবাধিকার পদদলিত করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে বার বার।  #     

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/৪

ট্যাগ