আস্তানা বৈঠকের ব্যাপারে কতখানি আশাবাদী হওয়া যায়?
(last modified Mon, 23 Jan 2017 12:50:27 GMT )
জানুয়ারি ২৩, ২০১৭ ১৮:৫০ Asia/Dhaka

আজ থেকে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনা। ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এবং জাতিসংঘের উপস্থিতিতে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছে সিরিয়ার ১৪টি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

এটি হচ্ছে এমন একটি বৈঠক যেটি আঞ্চলিক দেশগুলোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলোর কোনো ভূমিকা এখানে নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক দেশগুলো ইচ্ছা করলে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের মধ্যকার যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে।

অবশ্য সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আস্তানা বৈঠকের বিষয়টিকে অনুমোদন করেছে। এ বৈঠকের উদ্যোগ প্রথমে নিয়েছে ইরান ও রাশিয়া এবং পরে তাতে যোগ দিয়েছে তুরস্ক। বলা হচ্ছে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির নেতৃত্বে সিরিয়ায় তৎপর ১৪টি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আস্তানা বৈঠকে যোগ দিয়েছে।  এতগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়ায় দীর্ঘ ছয় বছর পর সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

অবশ্য এই আলোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি সিরিয়ার কৌশলগত আলেপ্পো শহর পুনরুদ্ধারের পর। সিরিয়ার সেনাবাহিনী গতমাসে সশস্ত্র বিদ্রোহী ও বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কবল থেকে আলেপ্পো শহর পুনরুদ্ধার করে। এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি রণাঙ্গণেও সিরিয়ার পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়।

আলেপ্পো পুনরুদ্ধারের পর গত ৩০ ডিসেম্বর সিরিয়ায় সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের উদ্যোগে ওই যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আস্তানা বৈঠকে বসা ছাড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি তাদের মদদদাতাদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করছেন, সিরিয়ার বিভিন্ন সেক্টরের সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর একের পর এক বিজয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল সশস্ত্র বিদ্রোহী ও উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো। এ অবস্থায় তারা তাদের আগের  একতরফা দাবিগুলো থেকে সরে আসে। যতদিন আলেপ্পো শহর বিদ্রোহীদের দখলে ছিল ততদিন তারা এমন কিছু অযৌক্তিক দাবি তুলছিল যা মেনে নেয়া সিরিয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।  এ কারণে এর আগে পশ্চিমাদের মধ্যস্থতায় জেনেভায় একাধিক শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়।  এ ছাড়া, এর আগে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার বহু প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।

কিন্তু এবার আলেপ্পো পুনরুদ্ধারের পর প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি প্রায় একমাসের মতো বলবৎ রয়েছে। এই অস্ত্রবিরতিকে স্থায়ী রূপ দিতে এবং যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার সরাসরি আলোচনায় বসাতে আস্তানা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, সিরিয়ার বাস্তবতা উপলব্ধি, দেশটির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি সেদেশের জনগণের হাতে সমর্পন এবং উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারলে সিরিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।  প্রেসিডেন্ট আসাদ নিজেও একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচনের ব্যালট পেপারই তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে এবং জনগণ যে রায় দেবে তা তিনি মেনে নেবেন।

সব দিক বিবেচনা করলে বোঝা যায়, ছয় বছর আগে সিরিয়ায় বিদেশি মদদে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির সংকট সমাধানের আশাবাদ বর্তমান সময়ের মতো আগে কখনো তৈরি হয়নি। কাজেই গোটা বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে আস্তানা বৈঠকের দিকে। জাতিসংঘের উপস্থিতিতে দু’দিনব্যাপী এ বৈঠক থেকে কি সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে তার ওপর সিরিয়া সংকটের সমাধান অনেকাংশে নির্ভর করছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন যে সংকটের সমাধান করতে পারেননি বর্তমান মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস তার সমাধানে কতখানি সফল হন সেটাও এখন দেখার বিষয়।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/২৩