ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে ইসরাইল ও সৌদি আরব
সৌদি আরব ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা।
কাতারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতীয় কমিটির প্রধান আলী বিন সামিখ আল মেরি জানিয়েছেন, সৌদিতে অবস্থিত কাতারের নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান মক্কার মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে সৌদি সরকার। এমনকি কাতারের নাগরিকদেরকে অবিলম্বে সৌদি আরব ত্যাগ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওদিকে, কুদস ওয়াকাফ পরিচালনা পরিষদও এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি সেনারা মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দিচ্ছে অথবা তাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছে।
সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন আলে সৌদি পরিবার নিজেদেরকে মুসলমানদের প্রথম পবিত্র স্থান মক্কা ও দ্বিতীয় পবিত্র স্থান মদিনার খাদেম বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এ দু'টি পবিত্র ধর্মীয় স্থানকে সবসময়ই অন্যায় রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। সৌদি আরব তাদের কাজেকর্মে প্রমাণ করেছে, যখনই কোনো দেশের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তখনই তারা ধর্মকে কিংবা হজের মতো ধর্মীয় আহকামকে ব্যবহার করে এবং ওই দেশের নাগরিকদের এসব পবিত্র স্থানে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি সরকার ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও সর্বশেষ কিছুদিন আগে কাতারের নাগরিকদের হজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়া, সৌদি আরব ২০১৫ সালের শেষের দিকে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সৌদি আরব সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে ২০১৬ সালে ইরানি নাগরিকরা হজ করতে পারেননি। সৌদি আরব কাতারের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন ওই দেশের নাগরিকদেরও মক্কার মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এসব ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় সৌদি সরকার হজকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।
গত বছর জুনে ইরানের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল প্রেস টিভি ২৩৫৩ জনে ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল। এতে অংশগ্রহণকারী ৬৮শতাংশই মনে করেন, সৌদি আরব হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিল মার্কিন নাগরিক এবং এরপর ছিল কানাডা ও ব্রিটেনের নাগরিকরা।
পবিত্র হজ হচ্ছে সব মুসলমানের জন্য শরীয়তী বিধান কিন্তু তারপরও সৌদি আরব হজকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। মক্কা-মদিনায় কাউকে যেতে বাধা দেয়ার কোনো অধিকারই সৌদি আরবের নেই। এ ব্যাপারে পাকিস্তান সংসদের পররাষ্ট্র নীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিশনের সদস্য সাইয়্যেদ হোসেন তাহের মাশহাদি গত বছরের জুনে ইরনা বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, সৌদি আরব হজকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। অথচ এটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিষয় এবং হজে যাওয়ার অধিকার সামর্থবান সব মুসলমানের রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সৌদি আরব ও দখলদার ইসরাইল উভয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আল আকসা মসজিদ সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান হলেও ইসরাইলি সেনারা বহুবার ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরকে ওই মসজিদে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। গতকালও তারা সেখানে প্রবেশে বাধা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরাইল এমন সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে যখন আন্তর্জাতিক কনভেনশনে ধর্মীয় অধিকারকে সার্বজনীন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। #
পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/১২